Onubad MediaHistory

এলসিম হাতুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

Life of Elsim Hatun

আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আজকের আমরা কুরুলুস উসমান সিরিজে আগত নতুন চরিত্র এলসিম হাতুনের জীবনী নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।ইতিহাস উসমানীয় সুলতান ও উসমানীয় সুলতানদের স্ত্রীদের গল্পে পরিপূর্ণ। এই মহান সালতানাতের অন্তর্গত প্রতিটি চরিত্র গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ। শত শত বর্ষ পেরিয়ে গেলেও ভক্তদের হৃদয়ে বেঁচে আছে এই চরিত্রগুলো এবং দর্শকরা তাদের জিবনী সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। তেমনি একজন ঐতিহাসিক চরিত্র হচ্ছেন এলসিম হাতুন৷ 

এলসিম হাতুন সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

ইতিহাসে এলসিম হাতুনের আসল নাম হচ্ছেন এফতানদিজ হাতুন। সে একজন প্রকৃতি তুর্কী বংশগত কন্যা।  ইতিহাসবিদ বলেন, আনাতোলিয়াতে ১২৯০ সালের কাছাকাছি কোন সালে এলসিম হাতুন জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম ছিল গুন্দুজ বে।  তিনি কায়ী বসতীর অন্তরগত একটি শাখা কায়ী বসতীর প্রধান ছিলো। এলসিম হাতুন ছিল গুন্দুজ বের একমাত্র কন্যা। এলসিম হাতুন ছিলো একজন সাহসী যোদ্ধা, বিভিন্ন যুদ্ধে তার অবদান পাওয়া যায়।

ইতিহাসে একজন সাহসী সুলতানের স্ত্রী হতে হলে বেশ কিছু গুন থাকা প্রয়োজন, সুলতানের অনুপস্থিতিতে কঠিন মূহুর্ত গুলো কাটিয়ে উঠার মতো সাহসী হতে হয় সুলতানের স্ত্রীগনকে। তেমনি এক সাহসী নারী ছিলেন এলসিম হাতুন। ইতিহাসে উরহান গাজীর স্ত্রীগনের তালিকায় এলসিম হাতুনের নাম খুজে পাওয়া যায়।

কোন কোন ইতিহাসবিদ উরহান গাজীর দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে এলসিম হাতুনের নাম উল্লেখ করেছেন।কারো কারো মতে রাষ্ট্রের সার্থে উরহান গাজী ৪ টি বিবাহ করেছিলেন। আবার অনেক ইতিহাসবিদ বলেন, ওরহান গাজীর কমপক্ষে সাতজন স্ত্রী ছিল। প্রথমত নীলুফার হাতুন, গ্রীক বংশোদ্ভূত খ্রিস্টান রাজকুমারি।তথা, বর্তমান সিরিজে দেখানো হুলোফিরা হাতুন, এটাই উরহান গাজীর প্রথম বিবাহ।

হুলোফিরা তথা, নিলুফার হাতুন  উরহান গাজীর উত্তরসূরি সুলতান।মুরাদের মা ছিলেন৷ আশা করি, কুরুলুস উসমান সিরিজে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হবে।  দ্বিতীয়, আসপোরসা হাতুন, সে ছিল বাইজেন্টাইন গ্রীক বংশোদ্ভূত সম্ভ্রান্ত একজন নারী। তিনি ওরহান গাজীর দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মা ছিলো। রাজনৈতিক কারনে ওসমান গাজি তাকে কয়েকটি গ্রামের মালিকানা দিয়েছিলেন।

তৃতীয়, মেলেক হাতুন, ধারনা করা হয়, তিনি একজন সেলজুক বংশবত ছিলেন। চতুর্থ হচ্ছেন এফেন্দি হাতুন। সে এফেন্দিজে এলসিম হাতুন নামেও পরিচিত। ইতিহাসবিদরা মনে করে, তিনি ছিলেন মাহমুদ আল্প বা গুন্দুজ বেয়ের কন্যা। এছাড়াও উরহান গাজীর স্ত্রী ছিলেন  থিওডোরা কান্তাকৌজেন, সে ছিলো ওরহান গাজীর সন্তান হালিল বের মা। আরো ছিলো  থিওডোরা উরোস, সে স্টেফান চতুর্থ ডুসানের মেয়ে। এই সব স্ত্রী একসাথে ছিল, এটা মনে করবেন না।  যেমন, শেষের জন অর্থাৎ থিওডোরা উরোসের প্রসঙ্গে বলা হয়, ওরহান গাজি তাকে শেষ জীবনে বিয়ে করেছিলেন। আরেকটা বিষয় হচ্ছে, ওরহান গাজীর অধিকাংশ বিয়েই ছিল রাজনৈতিক ও বন্ধুপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য।

জনপ্রিয় তুর্কী সিরিজ কুরুলুস উসমান সিরিজে এলসিম হাতুন কে একজন কায়ী হায়মে মা হাতুনের বংশের দেখানো হচ্ছে,  এখানে দুটি বিষয় হতে পারে,  প্রথম আর্তুগ্রুল গাজী যখন সীমান্ত এলাকায় চলে আসলেন এবং ধীরে ধীরে যখন কায়ীরা চার দিকে ছড়িয়ে ছিটে থাকতে শুরু করে তখন ধীরে ধীরে অনেক ছোট ছোট কায়ী বসতী গড়ে উঠতে থাকে। 

তেমনি এক বসতীর প্রধান ছিলেন গুন্দুজ বে, এবং গুন্দুজ বের কন্য ছিলেন এলসিম হাতুন। গুন্দুজ বে যেহতু আনাতলিয়াতে থাকতো, সেখানে বিভিন্ন সময় মঙ্গল বাহিনীর সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়েছে তাদেরকে। সুতরাং এলসিম হাতুন ছোট বয়স থেকেই লড়াই করে বড় হয়েছেন, এবং মঙ্গল বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই তার উঠতি বয়স পার করেছেন।  এছাড়াও আরো একটি তথ্য মতে এলসিম হাতুন আর্তুগ্রুল গাজীর মা হায়মে মার বংশের কেউ হবেন। তথা, হায়মে মার ভাইয়ের নাতি হবেন এলসিম হাতুন।

এলসিম হাতুন কায়ী বংশের হওয়ার আরো একটি তথ্য রয়েছে, আমরা যারা দিরিলিস আর্তুগ্রুল সিরিজ দেখেছি, আমরা সবাই জানি আর্তুগ্রুল গাজীর পিতা সুলাইমান শাহ মৃত্যুর আনাতোলিয়া থেকে মহান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিজেদের সাধীন করতে আর্তুগ্রুল গাজী সীমান্ত এলাকায় আসার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার এমন সিদ্ধান্তে অনেকে বিরুদ্ধীতা শুরু করে, তখন আর্তুগ্রুল গাজী তার পক্ষের কিছু লোক নিয়ে সীমান্ত এলাকার উদ্দেশ্যে রৌনা হন। তখন আর্তুগ্রুল গাজীর দুই ভাই সুনগুর তেকিন ও গুন্দুজ বেও তার বিরুদ্ধীতা করে কায়ী বসতী নিয়ে সেখানেই থেকে যান।

 দুই ভাগ হয়ে যায় কায়ী বসতী। পরবর্তীতে সীমান্ত এলাকায় আর্তুগ্রুল গাজী যখন সফল হতে থাকে,  তখন ধীরে ধীরে গুন্দুজ বে সহ সুনগুন তেকিন বেও সীমান্ত এলাকায় চলে এসেছিলেন। তখনও কায়ী বসতীর একটি অংশ আনাতোলিয়াতে ছিলো। ধীরে ধীরে গুন্দুজ বে ও সুনগুর তেকিন বেরা মৃত্যু বরন করলে আনাতোলিয়াতে থাকা কায়ী বসতীর হাল ধরেন এলসিম হাতুনের বাবা গুন্দুজ বে। যাকে আমরা বর্তমান কুরুলুস উসমান সিরিজে দেখতে পাচ্ছি। Read in English

কুরুলুস উসমান সিরিজে এলসিম হাতুনের পরিচয় গোপন ও তাদের সীমান্ত এলাকায় উসমান বের কাছে আসার কারন কি?  গত পর্বে গুন্দুজ বে বিষয়টি বলেছেন, অনেকে বুঝেননি, আমরা ইতিহাস থেকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলি, সেই সময়ে আনাতলিয়াতে মঙ্গল প্রধান ছিলেন ওলজায়তু খান। সে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন। কিন্তু ক্ষমতার জন্য সে কায়ীদের উপর জুলুম নির্যাতন চালাতো।

ওলজায়তু খান নিজেকে এবং তার সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করতে আনাতোলিয়াতে থাকা বিভিন্ন বড় বড় বসতীর বীমদের মেয়েকে বিয়ে করতেন বা মঙ্গল বড় কমান্ডারদের সাথে বিয়ে দিতেন, যাতে ঐ বসতীর সেনারা ওলজায়তু খানের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। 

ওলজায়তু খানের এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সে গুন্দুজ বের মেয়ে এলসিম হাতুন কে বিয়ে করতে চেয়েছিলো। এবং গুন্দুজ বের সেনা নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলো। তখন গুন্দুজ বে এলসিম হাতুনের পরিচয় লুকিয়ে তাকে সীমান্ত এলাকায় উসমান বের আশ্রয়ে নিয়ে আসেন৷ এবং ইতিহাস অনুসারে পরবর্তীতে হলেও এলসিম হাতুনের সাথে উরহান গাজীর বিবাহ হবে৷

Read more

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button