Onubad MediaHistory

চেরকুতায় সম্পর্কে জানুন

চেরকুতায় এর সঠিক ইতিহাস

Real life of Cerkutay

মোঙ্গল বাহিনি,  নামটি শুনলেই শরীর কেঁপে উঠে। বিবেক স্তব্ধ হয়ে যায়।  রক্তে রঞ্জিত এই নামটা৷  এ বাহিনি যেখানেই যেতো সব ধ্বংস করে দিতো। নারী, পুরুষ, বুড়ো এবং শিশু কেউ তাদের হত্যা থেকে রেহাই পেতোনা। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে তাদের মধ্যে অল্প কিছুদিনের ভিতরে ইসলামের দাওয়াত শুরু হয়। এবং তারাও ইসলামের ছায়াতলে আসতে শুরু করে। অনেক বড় বড় মোঙ্গল কমান্ডারও ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন চেরকুতাই। যিনি মোঙ্গল কমান্ডার ছিলেন।  পরে ইসলাম গ্রহণ করে ইসলামের জন্য প্রাণ নিবেদিত সৈনিক হয়ে যান।  চলুন তাহলে আজ আমরা তার জীবনি সম্পর্কে জেনে আসি।

 জন্ম ও শৈশব:

চেরকুতায় আল্প কোথায় জন্ম গ্রহণ করে তা জানা যায়নি। তবে কোনে এক মোঙ্গল বসতিতে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন।  ছোটবেলাই তিনি তার পিতামাতাকে হারান। মোঙ্গলরা পিতামাতাহীন ছোট ছেলেদেরকে তাদেরকে নিয়ে কঠিন থেকে কঠিন যুদ্ধ প্রশিক্ষণ দেওয়াতো। চেরকুতাই আল্পের ব্যাপারেও এর বিপরীত ঘটেনি। তাকে ছোটবেলা থেকেই যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এবং তিনিও যুদ্ধের সব প্রশিক্ষণগুলো সুন্দরভাবে শিখে নেন। তাহলে বুঝা যায় অন্য আট-দশটি ছেলের মতো তার শৈশব কাটেনি।  মায়ের মমতা এবং বাবার আদর কি জিনিস তা তিনি শৈশবে দেখেননি। যার কারণে মঙ্গলদের মতই হিংস্র হয়ে উঠেন। 

কমান্ডারের দায়িত্ব :

তার বীরত্ব ও সাহসীকতার কারণে মোঙ্গল কমান্ডার গেয়হাতু তাকে নিজের শক্তিশালী সৈনিকদের দলে থাকতে বলেন।  এরপর গেয়হাতু তার হিংস্র মনোভাব দেখে তাকে কমান্ডার বানিয়ে বালগাইয়ের নিকট পাঠিয়ে দেয়।  বালগাই তাকে যে কোনো যুদ্ধে কমান্ডার বানিয়ে সাথে নিয়ে যায়।

তুর্কীদের উপর আক্রমণ:

সোগুতে উসমান গাজী তার পিতার অনুসরণ করে স্বাধীন বেইলিকের স্বপ্ন পূরণের জন্য বিভিন্ন সময় মোঙ্গল বাহিনীর উপর হামলা করে। এর জের ধরেই বালগাই তাদের থামানোর জন্য তুর্কীদের ভূমিতে আসে। এবং জোরদার আক্রমণ শুরু করে।  তারা উসমান গাজীর বসসতিতেও হামলা চালায়।  কিন্ত উসমান গাজী তখন বসতিতে ছিলেননা। মোঙ্গলরা হামলা করে পুরো বসতি জালিয়ে।  ছোট,বড় যুবক,আবাল,বৃদ্ধ বণিতা কাউকেই তারা রেহায় দেয়নি। সবাইকে নির্বিচারে হত্যা করেছে।  সেই বহিনীতে চেরকুতাই ছিলো একজন সেনা কমান্ডার। 

চেরকুতাইয়ের ইসলাম গ্রহণ:

বালগাইয়ের সেনা কমান্ডার ছিলো দুজন ; এক হলো চেরকুতা, দ্বিতীয় হলো কোঙ্গার( গোকতুর্ক)। গোকতু্র্ক সোগুত আসার অল্প কিছুদিন পরেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নেয়। আসলে গোকতুর্কের মা বাবাকে মেরে তাকে ছোটবেলায় মোঙ্গলরা নিয়ে যায়। সে মূলত মুসলমানই ছিলো তবে সে এটা জানতোনা। 

উসমান গাজী যখন বালগাইকে পরজিত করে এবং বালগাই যুদ্ধে নিহত হয়, তখন চেরকুতাই একা হয়ে পড়ে।  সে পারছেনা গেইহাতুর কাছে যেতে, আর না পারছে এখানে থাকতে।  মোঙ্গলরা পরাজিত কোনো কমান্ডারকে দেখতে পারতনা সারা জীবন তাকে লাঞ্চনার স্বীকার হতে হতো। তাই চেরকুতাই দিশেহারা হয়ে উসমাম গাজীর সাথে চুক্তি করে যে সে তাকে সাহায্য করবে বিনিময়ে উসমান গাজী তাকে স্বর্ণমুদ্রা দিবে। এভাবেই সে অনেকদিন মুসলমানদের সংস্পর্শে থাকে, এবং মুসলমানদের রীতিনীতি দেখে। দিন যতই গড়াচ্ছিলো ততোই সে মুগ্ধ হচ্ছিলো। মুসলমানরা এতই ভালো এতই সুন্দর তাদের নিয়ম-নীতি ৷ এক পর্যায়ে সে ইসলাম গ্রহণ করে নেয়। 

চেরকুতাই আল্পের যুদ্ধসমূহ:

ইসলাম গ্রহণের পর চেরকুতাই থেকে চেরকুতাই আল্প হয়ে যায়। তিনি তার আগের নামই বহাল রাখেন। তিনি উসমান গাজীর সাথে অনেকগুলো যুদ্ধ করেন। উসমান গাজী তার মাধ্যমে অনেকগুলো শহর বিজয় করার সুযোগ পান।  কেননা, তিনি ছিলেন গোয়েন্দাগিরিতে অভিজ্ঞ।  উসমাম গাজীর জীবনের বড় একটি বিজয় হচ্ছে ইনেগুল বিজয়। এই ইনেগুল বিজয়ের সময় চেরকুতাই আল্প তার জীবন বাজি রেখে শত্রুদের মাঝে গোয়েন্দাগিরি করেছেন। 

এবং যুদ্ধের সময় তোলোয়ার নিয়ে যুদ্ধে নেমে গেছেন। এবং মারমারাজিক বিজয়ের সময়ও তিনি গুপ্তচর হিসেবে ছদ্মবেশে সেখানে থাকেন। এবং মুসলিম বাহিনীর জন্য ভিতর থেকে ফটক খুল দেন। এই ফটক খুলতে গিয়ে তিনি গভীরভাবে আহত হন। তিনি উসমান গাজির সাথে আরো অনেকগুলো দুর্গ জয় করেন এবং উসমান গাজির সাথে প্রত্যেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।  যে সমস্ত দুর্গ জয়ে তিনি অবদান রাখেন; ইনেগুল, মারমারাজিক,ইয়েনিশহর, বিলেজিক, কিতা, এবং বুরসা বিজয়েও উরহানের সাথে থাকেন।

দাম্পত্য জীবন:

তিনি প্রথমে উসমান গাজীর চাচাতো বোন আইগুল হাতুনকে বিবাহ করেন৷ আইগুল হাতুন ইনেগুল বিজয়ের সময় তীরবিদ্ধ হয়ে  যুদ্ধে মারা যান। আইগুল হাতুন ছিলেন একজন সাহসী মহিলা।  তার মৃত্যুতে চেরকুতাই আল্প ভেঙে পড়েন। তার ঘরে কোনে সন্তান হয়নি। এরপর তিনও অতি সাধারণ একজন মহিলাকে বিয়ে করেন। ঐ মহিলা থেকে তার একটি সন্তান ছিলো।

ব্যক্তিত্ব মূল্যায়ন:

তিনি ছিলেন একজন রসিক মানুষ,  সবাইকে হাঁসাতেন। এবং খাবার একটু বেশী খেতেন,  তাই দুষ্টমি করে সবাই তাকে খাবার নিয়ে খোটা দিতো। তিনি উসমান গাজীর আস্হাভাজন ছিলেন। এবং কয়েক বছর সেনাপ্রধানরে দায়িত্বও পালন করেন৷ ইসলাম গ্রহণের পর তার হিংস্র মনোভাব একদম দুর হয়ে যায়। ইসলাম গ্রহণের পর বামসি বেইরেক তাকে নিজ পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন৷ বামসি বেইরেক তার বিখ্যাত তোলোয়ার দুটির ব্যপারে অসিয়ত করে যান এগুলো যাতে তার মৃত্যুর পর চেরকুতাই আল্পকে দেওয়া হয়। read more

  মৃত্যু ও দাফন:

চেরকুতাই আল্প কতে বছর বেঁচে ছিলেন তা নিশ্চিত করে যানা যায়নি। তবে তিনি অনেকদিন হায়াত পেয়েছেন। উসমান গাজীর মৃত্যুর অনেক বছর পর তিনি মৃত্যু বরণ করেন। এবং তাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে তাও নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে সোগুতে তাদের বানানো মাজার আছে। more

-লেখক যায়েদ হাসান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button