History

তুরান শাহের জীবনী

তুরান শাহের জীবনী

নাম জন্ম ও বংশ:

তুরানশাহ- তার পুরো নাম শামসুদ্দিন তুরানশাহ ইবনে আইয়ুব মালিকুল মুয়াযযাম শামসুদ দাওলা ফখরুদ্দিন। তিনি মিশরে তার ছোট ভাই সুলতান সালাহুদ্দিনের অবস্থানকে শক্তিশালী করার জন্য এবং নুবিয়া ও ইয়েমেন উভয়ের আয়ুবীয়দের বিজয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার জন্য বিখ্যাত। তুরান শাহ সব সবসময় সালাহউদ্দীন আইয়ূবীকে সহযোগিতা ও সমর্থন করেছেন।তাদের মাঝে বিরোধিতা দেখা দিলেও তা বেশিদিন ঠিকে থাকেনি।

মিশরে আগমন :

সালাহুদ্দিন ফাতিমীয় খলিফার উজির ছিলেন। ১১৭১ সালে, সিরিয়ার সুলতান নুরউদ্দিন জেনগি তুরানশাহকে তার ভাইয়ের সাথে যোগ দিতে মিশরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন, এমন সময়ে নুরুদ্দিন এবং সালাহুদ্দিনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ছিল। ভাইদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির আশায় বাদশাহ নুরুদ্দিন, তুরানশাহকে সালাহুদ্দিনের তত্ত্বাবধানে ক্ষমতা প্রদান করেন।

তুরানশাহ কবি দরবারী উমারা ইয়ামানির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন, যিনি ১১৬৯ সালে সালাহুদ্দিনের উজির হিসেবে ক্ষমতায় আসার আগে ফাতেমীয় রাজনীতিতে একজন শক্তিশালী খেলোয়াড় ছিলেন। ১১৭১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে শেষ ফাতেমীয় খলিফা আল-আদিদ মারা যান এবং আইয়ুবীয় রাজবংশ মিশরে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। খলিফার মৃত্যুর পর তুরানশাহের বিরুদ্ধে খলিফাকে হত্যার একাধিক অভিযোগ ওঠে। খলিফার মৃত্যুর পর তুরানশাহ পূর্বে ফাতেমীয় আমিরদের দখলে থাকা কায়রোর একটি শিবিরে বসতি স্থাপন করেন।

তুরান শাহের সামরিক অভিযানঃ

এই বীর জীবনে বহু আন্দোলন,সংগ্রাম,যুদ্ধ – বিগ্রহে অংশ গ্রহন করেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি যুদ্ধের আলোচনা নিম্নে দেওয়া হলো।

১:নুবিয়া বিজয় : নুবিয়ান এবং মিশরীয়রা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মিশরের দুই দেশের সীমান্ত অঞ্চলে একাধিক সংঘর্ষে লিপ্ত ছিল। ফাতেমীয়দের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তাদের উত্তেজনা বেড়ে যায়, কারণ মিশরীয় সীমান্ত শহরগুলোর বিরুদ্ধে নুবিয়ান অভিযান আরও সাহসী হয়ে ওঠে যা শেষ পর্যন্ত ১১৭২ সালের শেষের দিক থেকে ১১৭৩ সালের প্রথম দিকে প্রাক্তন কৃষ্ণ ফাতেমীয় সৈন্যরা গুরুত্বপূর্ণ শহর আসওয়ান অবরোধ করে। প্রাক্তন ফাতিমিদের অনুগত আসওয়ানের গভর্নর সালাহুদ্দিনের কাছে সাহায্যের অনুরোধ করেন।

সালাহুদ্দিন আসওয়ানকে মুক্ত করার জন্য কুর্দি সৈন্যদের একটি বাহিনী নিয়ে তুরানশাহকে প্রেরণ করেন, কিন্তু নুবিয়ান সৈন্যরা আগেই এলাকা ছেড়ে চলে যায়। তা সত্ত্বেও তুরানশাহ নুবিয়ান শহর ইব্রিম জয় করেন এবং নুবিয়ানদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযান চালাতে শুরু করেন। তার আক্রমণগুলো অত্যন্ত সফল বলে অনুমিত হয়। তার আক্রমণের ফলে ডঙ্গোলায় অবস্থিত নুবিয়ান রাজা তুরানশাহের সাথে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেন।

আশু বিজয়ের জন্য আগ্রহী তুরানশাহ প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে রাজি ছিলেন না। তবে তার নিজের দূত নুবিয়ার রাজার সাথে দেখা করে প্রতিবেদন করেন যে, সমগ্র দেশটি দরিদ্র এবং দখলের যোগ্য নয়। যদিও আইয়ুবীয়রা নুবিয়ানদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছিল। তুরানশাহ আরও লাভজনক অঞ্চলে তার দৃষ্টি স্থাপন করেছিলেন।তিনি নুবিয়ার বিরুদ্ধে অভিযানের পর মিশরে প্রচুর সম্পদ অর্জন করতে সক্ষম হন এবং তার সাথে অনেক নুবিয়ান এবং খ্রিষ্টান ক্রীতদাসকে নিয়ে আসেন।

২:ইয়েমেন বিজয় : নুবিয়ায় তার সাফল্যের পর তুরানশাহ তখন নিজের জন্য একটি ব্যক্তিগত দখল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। সালাহুদ্দিনের সহযোগী বাহাউদ্দিন ইবনে শাদ্দাদ পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, ইয়েমেনে একজন ধর্মদ্রোহী নেতা ছিলেন যিনি নিজেকে “মসীহ “বলে দাবি করছিলেন এবং এটিই প্রধান কারণ ছিল যে সালাহুদ্দিন তুরানশাহকে অঞ্চলটি জয় করার জন্য প্রেরণ করেছিলেন।


তুরানশাহ ১১৭৪ সালে যাত্রা শুরু করেন এবং সেই বছরের শেষের দিকে মে মাসে “যাবিদ” শহর এবং বন্দর শহর অ্যাডেন (ভারত, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার সাথে বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ) এ দুটি শহর দ্রুত জয় করেন। ১১৭৫ সালে তিনি হামদানি সুলতান আলী ইবনে হাতেমকে ইয়েমের রাজধানী সা’না থেকে বিতাড়িত করেন, যখন সা’দাহের “জায়েদি “উপজাতিদের ক্রমাগত অভিযানের ফলে পরবর্তী সেনাবাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে।

তখন তুরানশাহ তার বেশিরভাগ সময় সমগ্র দক্ষিণ ইয়েমেনকে সুরক্ষিত করতে এবং আইয়ুবীদের দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেন। যদিও “ওয়াহিদ” ইয়েমেনের উত্তরের উচ্চভূমি দিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিল, ইয়াসির, শিয়া বানু করম উপজাতির প্রধান যে অ্যাডেন শাসন করেছিল তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং তুরানশাহের নির্দেশে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

জাবিদের “মাহদি” দাবিদার শাসকদেরও একই পরিণতি হয়েছিল। তুরানশাহের বিজয় ইয়েমেনের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল যা পূর্বে তিনটি রাজ্যে (সানা, যাবিদ এবং এডেন) বিভক্ত ছিল যা আইয়ুবীয়দের দখলদারিত্বের কারণে একত্রিত হয়েছিল।

ক্ষমতা হস্তান্তর:

যদিও তুরানশাহ ইয়েমেনে তার নিজস্ব অঞ্চল অধিগ্রহণে সফল হয়েছিলেন, তবে তিনি স্পষ্টতই কায়রোতে তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সেটি করেছিলেন। সালাহুদ্দিন ইয়েমেনে তাকে তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে পুরস্কৃত করেন। তবে তুরানশাহ ইয়েমেনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি এবং বারবার তার ভাইকে তাকে স্থানান্তর করতে বলেছিলেন। ১১৭৬ সালে তিনি সিরিয়ায় স্থানান্তরের সুযোগ পেয়েছিলেন যা তিনি দামেস্কে থেকে শাসন করেছিলেন।

তিনি ১১৭৮ সালে বালবেকের আশেপাশে তার পিতার পুরনো জায়গীরও পেয়েছিলেন। ১১৭৯ সালে তিনি আলেকজান্দ্রিয়া শাসনে স্থানান্তরিত হন এবং তার কিছুদিন পরই ১১৮০ সালের ২৭ জুন তিনি মারা যান। তার মৃতদেহ তার বোন তাকে দামেস্কে তার নির্মিতএকটি মাদ্রাসার পাশে দাফন করেন।

তিনি সময়ের পালাক্রমে কয়েকটি রাষ্ট্র, শহর শাসন করেন। এগুলোর মধ্য থেকে তিনি ইয়েমেন শাসন করেন ১১৭৪থেকে ১১৭৬র্যন্ত।এবং দামেস্ক ১১৭৬ থেকে ১১৭৯সাল পর্যন্ত এবং বালবেক ১১৭৮থেকে ১১৭৯ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। অবশেষে আলেকজান্দ্রিয়ায় তুরান শাহ ১১৮০ সালে মারা যান। Read More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button