কনুর আল্পের বাস্তব ইতিহাস
কনুর আল্পের বাস্তব ইতিহাস
কোনো রাষ্ট টিকে থাকার জন্য যে কয়টি স্তম্ভ থাকে তার মধ্যে একটি হচ্ছে সেনাপ্রধান। যে রাষ্ট্রের সেনাপ্রধান যতো চতুর এবং শক্তিশালী হবে ঐ রাষ্ট্রকে সবাই ততো বেশী ভয় পাবে এবং ঐ রাষ্ট্রের শত্রুও তাদের ভয় পাবে। একজন সাহসী কমান্ডার যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। উসমানী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠানের সময়ও এমনই একজন সাহসী কমান্ডার ছিলেন। যে ছিলো খুবই সাহসী এবং বুদ্ধিমান। এবং উসমান গাজীর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যার অসীম অবদান রয়েছে। সেই সাহসী বীরের নাম হচ্ছে কনূর আল্প। চলুন তাহলে আজ আমরা এই বীরের জীবনি সম্পর্কে জেনে নিই।
কনূর আল্পের উত্তরসূরী: আমরা জানি ক্ষমতা বা সালতানাতের দায়িত্ব বংশীয় উত্তরোধীকার সূত্রে আসে। কিন্তু আনুগত্যের দায়িত্ব যে উত্তরধীকার সূত্রে আসে তা কনূুর আল্পের জীবনি পড়লেই বুঝা যায়।
কনূর আল্পের দাদা ছিলেন উসমান গাজীর দাদা সুলাইমান শাহের বিশ্বস্ত ও অনুগতো একজন সৈনিক এবং একিসাথে বন্ধুও বটে। কায়ীরা যখন তিবরীজ থেকে আলেপ্প এবং আলেপ্প থেকে রোমের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে ঘুরাঘুরি করছিলো তখন অনেকে তাদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু কনূর আল্পের দাদা সর্বদাই সুলাইমান শাহের সাথে ছিলেন। তিনি সবসময় তদর পাশে থাকতেন এবং বিপদে সাহায্য করতেন।
এরপর সুলাইমান শাহের মৃত্যুর পর কায়ীরা সোগুতে চলে আসে। তখন কনূর আল্পের পিতা তুলুই বেগ আরতুরুল গাাজীর সাথে সোগুতে চলে আসেন। কনূর আল্পের পিতা তুলুই বেগও ছিলেন আরতুরুল গাজীর বিশ্বস্ত সৈনিক ও বন্ধু। যেভাবে তার পিতা সুলাইমান শাহের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে গেছেন ঠিক সেভাবেই তুলুই বেগও আরতুরুল গাজীর প্রতি তার আনুগত্য দেখান। যে আনুগত্য ছিলো বংশীয় দায়িত্ব।
জন্ম ও শৈশব: কনূুর আল্পের জন্ম তারিখ সম্পর্কে ইতিহাসে কিছু লিখা হইনি। তবে এতটুকু বলা হয়েছে যে, তিনি উসমান গাজীর কিছুটা ছোট ছিলেন। কিছুটা বলতে আমার ১– ৩ বছর বুঝি সাধারণত। উসমান গাজী জন্ম গ্রহণ করেন ১২৫২/৫৩ সালে। তাহলে বুঝা যায় কনূর আল্প ১২৫৪— ১২৫৭ এ সালগুলোর মধ্যেই জন্ম গ্রহণ করেন। তার শৈশব অন্য আট- দশটি ছেলের শৈশবের মতোই কেটেছে। শৈশব থেকেই উসমান গাজী এবং কনূর আল্পের মাঝে গভীর বন্ধুত্ব ছিলো। সোগুতে উসৃান গাজী ও অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে তার শৈশব অতিবাহিত হয়।
দাম্পত্য জীবন: ঐতিহাসিক তথ্য মতে জানা যায় কনূর আল্প এক যাযাবর সাহসী মেয়েকে বিবাহ করেন। এমনকি জানা যায় উসমান গাজির বিবাহের কয়েক দিন পরই নাকি কনূর আল্প বিবাহ করেন। তাদের তিনটি সন্তান জন্ম গ্রহণ করে।
কনূর আল্পের যুদ্ধাভিযান ও বিজয়সমূহ: কনূুর আল্প তার জীবদ্দশায় অনেকগুলো যুদ্ধ করেছেন প্রতিটা যুদ্ধেই তিনি বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ইনেগুল বিজয়ের সময় কঠিন বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ঐতিহাসিক তথ্য মতে জানা যায় তিনি আব্দুর রহমান গাজী ও সামসা চাভুস, আকচাগোচার সাথে অনেকগুলো যুদ্ধ করেন এবং উসমানী সাম্রাজ্যের সীমানাকে অনেক দুর বিস্তৃত করেন।
আকিয়াস বিজয়: কনূর আল্পের বিজয়ের মধ্যে আকিয়াস বিজয় একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সেখানের মানুষগুলো ছিলো সাহসী। ইতোপূর্বে সেলজুকরাও চেষ্টা করে তা দখল করতে পারেনি। কনূুর আল্প পাঁচ হাজার সৈন্য নিয়ে রওনা দেন আকিয়াস বিজয় করার জন্য। সন্ধ্যা অবদি সেখানে পৌঁছে যান এবং সকালে নামাযের পর যুদ্ধ শুরু হয় আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের বিজয় দান করেন। এবং আকিয়াস উসমানী সাম্রাজ্যের সীমানার অন্তর্ভুক্ত হয়।
কনূর শহর বিজয়: এই শহরের আসল নাম হচ্ছে হ্যান্ডিফ / হ্যান্ডিক। আকিয়াস বিজয়ের পরেই তিনি এই শহর বিজয় করতে বের হন। আকিয়াস বিজয়ের চেয়েও এই শহর তিনি আরো সহজে বিজয় করে নেন। এবং এই শহরকে বিজয় করার পর তিনি নিজের নামে এই শহরের নামকরণ করেন।
ডুজস শহর বিজয়ী কনূর আল্প: এই শহরটি তার সৌন্দর্যে ও বানিজ্যিক কারণে সবার রোষানলে পড়ে। সবাই তাকে বিজয় করতে চায়। অবশেষে এই মহান যোদ্ধাও তা বিজয় করার জন্য বেরিয়ে পড়েন। পথে একটি ছোট কেল্লা পড়ে তিনি তাও দখল করে নেন। এছাড়াও কনূর আল্প মুদুরনু, সাকারিয়া, এবং মেলান বেসিন শহর জয় করেন।
তার ব্যক্তিত্ব: তিনি ছিলেন উসমান গাজীর বিশ্বস্ত বন্ধু। তাদের বন্ধুত্ব এতোটাই গভীর ছিলো যে উসমান গাজী যখন বুরসা বিজয়ের কথা ব্যক্ত করেন। তখন তিনি তা জয় করে নেওয়ার ওয়াদা করেন এবং ওরহান গাজির শাষনামলে বুরসা জয়ের সেনাপ্রধান ছিলেন তিনি। তিনি উসমান গাজীর জীবদ্দশায় কখনো তাকে একা ছাড়েননি। সবসময় তার পাশে থেকেছেন। তিনি ছিলেন এমন এক সেনাপতি যার কাছে বড় বড় কমান্ডার ও গভর্নররা খুব খারাপভাবে পরাজিত হতো। তার বীরত্ব ছিলো সবার নিকট প্রসিদ্ধ। তিনি যে সমস্ত অঞ্চলগুলো বিজয় করেছিলেন তার অনেকগুলোই তার নিজের অধীনে ছিলো। তার মৃত্যুর পর এ সব অঞ্চল শাহজাদা মুরাদকে দেওয়া হয় যিনি ওরহান গাজীর পর সুলতান হয়েছিলেন। Read in English
মৃত্যু ও দাফন: ঐতিহাসিকদের তথ্য মতে কনূুর আল্প ১৩২৮ সালে মৃত্যু বরণ করেন। এবং তাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে এটা নিয়ে মতোভেদ রয়েছে। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে তাকো ডুজসে দাফন করা হয়েছে। এবং সোগুতে তার বানানো কবর রয়েছে প্রদশর্নের জন্য। more