Historyখোলা কলামসম-সামীয়ক

আরব-ইসরাইল যুদ্ধ কতবার হয়েছিল, কারা জয়ী হয়েছিল?

আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ইতিহাস

ফিলিস্তিন – ইসরায়েল সংঘাত ও ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম ও আরবীয়দের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ : তাগুত শক্তি বছরের পর বছর যুগে- যুগে ইসরাইলকে প্রশ্রয় দিয়ে মুসলিম দেশগুলোর উপরে হামলা চালিয়েছে বৃদ্ধ শিশুরা থেকে শুরু করে অসংখ্য নারী-পুরুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এবং ধ্বংস করেছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি এখন তারা বুঝুক ধ্বংসযজ্ঞের ফলাফল কি হতে পারে।

অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা মধ্যপাচ্যের বিষফোঁড়া, বর্তমান রাষ্ট্র ইসরায়েল তার দখলদার বাহিনী ১৯৬৭ সালে ‘মসজিদে আকসা’ জোরপূর্বক দখল করে নেয়। এরপর থেকে সেখানকার মুসলিম জনগণ মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য তাদের আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জায়ানবাদী,বর্বর ইসরায়েল একের পর এক মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা জোরপূর্বক দখল করে ইয়াহুদি বসতি সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখে এবং হত্যা-গুম চালিয়ে যাচ্ছে,যা আমরা কিছুদিন পূর্বেও অবলোকন করেছি এবং করতেছি।

বর্তমানে মসজিদে আক্বসা ও জেরুজালেম নগরী দখলদার ইসরায়েলিদের নিয়ন্ত্রণে। সেখানে মুসলিমরা নির্যাতিত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তারা ফিলিস্তিনের ভূখন্ড দখল করে নিচ্ছে। শত শত বছর পর আজও শুধু ফিলিস্তিন নয় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম মানবাত্মা একজন সালাহ উদ্দীন আইয়ুবীর জন্য কাঁদছে। অপেক্ষার প্রহর গুনছে। জেরুজালেম, ফিলিস্তিনে বসবাসরত মুক্তিকামী মুসলিম জনতা একজন সালাহ উদ্দিন আইয়ুবীর অপেক্ষায় দিন অতিবাহিত করছে। কবে আসবে তাদের মুক্তি? কে হবে এ যুগের সুলতান সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী? হামাস বা অন্যান্য ইসলামী দল কি পারবে সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর পথ অনুসরণ করে ফিলিস্তিন মুক্ত করতে? আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ইতিহাস

ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের ইতিকথা :

ফিলিস্তিনের গাজা থেকে দুই মাইল উত্তরে কিবুটস এলাকা। এখানে ১৯৩০’র দশকে পোল্যান্ড থেকে আসা ইহুদীরা কৃষি খামার গড়ে তুলেছিল। ইহুদিদের পাশেই ছিল ফিলিস্তিনী আরবদের বসবাস। সেখানে আরবদের কৃষি খামার ছিল। তারা কয়েক শতাব্দী ধরে সেখানে বসবাস করছিল। সে সময় মুসলমান এবং ইহুদীদের মধ্যে সম্পর্ক মোটামুটি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। আরব-ইসরাইল যুদ্ধ কতবার হয়েছিল, কারা জয়ী হয়েছিল?


কিন্তু ১৯৩০’র দশকে ফিলিস্তিনীরা বুঝতে পারলো যে তারা ধীরে-ধীরে জমি হারাচ্ছে। ইহুদিরা দলে-দলে সেখানে আসে এবং জমি ক্রয় করতে থাকে। ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার সময় প্রায় সাত লাখের মতো ফিলিস্তিনী বাস্তু-চ্যুত হয়েছে। তারা ভেবেছিল দ্রুত সমস্যার সমাধান হলে তারা বাড়িতে ফিরে আসতে পারবে। কিন্তু ইসরায়েল তাদের আর কখনোই বাড়িতে ফিরতে দেয়নি। ইসরায়েলের সাবেক প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজ বছর দশেক আগে বিবিসি’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনদের কেন এই দশা হলো সেজন্য তাদের নিজেদেরই প্রশ্ন করা উচিত।

মি: পেরেজ বলেন, “অধিকাংশ জমি ফিলিস্তিনদের হাতেই থাকতো। তাদের একটি আলাদা রাষ্ট্র হতো। কিন্তু তারা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে। ১৯৪৭ সালে তারা ভুল করেছে। আমরা কোন ভুল করিনি। তাদের ভুলের জন্য আমরা কেন ক্ষমা চাইবো?”

১৮৯৭ সাল থেকেই ইহুদিরা চেয়েছিলেন নিজেদের জন্য আলাদা একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে। ১৯১৭ সালে থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের ভূমি ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে তুরস্কের সেনাদের হাত থেকে জেরুজালেম দখল করে ব্রিটেন।
তখন ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের জন্য সহায়তা করবে। আরব-ইসরাইল যুদ্ধ কতবার হয়েছিল, কারা জয়ী হয়েছিল?


ব্রিটেনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড আর্থার জেমস বেলফোর বিষয়টি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন ইহুদি আন্দোলনের নেতা ব্যারন রটসচাইল্ডকে। তৎকালীন ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সে চিঠি “‘বেলফোর ডিক্লারেশন'” হিসেবে পরিচিত। ইহুদীদের কাছে ব্রিটেন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে ফিলিস্তিনের জমিতে তাদের জন্য একটি রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ করে দিবে। যদিও রোমান সময় থেকে ইহুদিদের ছোট্ট একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী সে জায়গায় বসবাস করতো। ইউরোপে ইহুদীদের প্রতি যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সেটি তাদের একটি নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের ভাবনাকে আরো তরান্বিত করেছে।

১৯৩৩ সালের পর থেকে জার্মানির শাসক হিটলার ইহুদিদের প্রতি কঠোর হতে শুরু করেন। ইতোমধ্যে জাহাজে করে হাজার হাজার ইহুদি অভিবাসী ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে আসতে থাকে। তখন ফিলিস্তিনী আরবরা বুঝতে পারে যে তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে।


ফিলিস্তিনী আরবরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বিদ্রোহ করে। তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছিল ব্রিটিশ সৈন্য এবং ইহুদি নাগরিকরা। কিন্তু আরবদের সে বিদ্রোহ কঠোর হাতে দমন করেছে ব্রিটিশ সৈন্যরা ফিলিস্তিনদের উপর ব্রিটিশ সৈন্যরা এতো কঠোর দমন-পীড়ন চালিয়েছিল যে আরব সমাজে ভাঙন তৈরি হয়েছিল। ইহুদীরা তাদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনে বদ্ধপরিকর ছিল। ব্রিটেনের সহায়তায় সে অনুযায়ী তারা কাজ এগিয়ে নিচ্ছিল। ১৯৩০’র দশকের শেষের দিকে ব্রিটেন চেয়েছিল হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অবস্থান জোরালো করতে।


সেজন্য আরব এবং ইহুদী- দু’পক্ষকেই হাতে রাখতে চেয়েছে ব্রিটেন। ১৯৩৯ সালের মাঝামাঝি ব্রিটেনের সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে যেখানে বলা হয়েছিল পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য পঁচাত্তর হাজার ইহুদি অভিবাসী আসবে ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে। অর্থাৎ সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছিল। ব্রিটেনের এ ধরনের পরিকল্পনাকে ভালোভাবে নেয়নি ইহুদিরা। তারা একই সাথে ব্রিটেন এবং হিটলারের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিকল্পনা করে। তখন ৩২ হাজার ইহুদি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়।

সেখান থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে ইহুদি সৈন্যরা ব্রিটেন এবং আরবদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের বাহিনীর দ্বারা লাখ-লাখ ইহুদি হত্যাকাণ্ডের পর নতুন আরেক বাস্তবতা তৈরি হয়। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর যেসব ইহুদি বেঁচে ছিলেন তাদের জন্য জন্য কী করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তখন ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে ইহুদীদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা আরো জোরালো হয়।

আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান ইসরায়েল রাষ্ট্রের পক্ষে জোরালো অবস্থান তুলে ধরেন। মি: ট্রুম্যান চেয়েছিলেন হিটলারের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া এক লক্ষ ইহুদিকে অতি দ্রুত ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে জায়গা দেয়া হোক। কিন্তু ব্রিটেন বুঝতে পারছিল যে এতো বিপুল সংখ্যক ইহুদিদের ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে নিয়ে গেলে সেখানে গৃহযুদ্ধ হবে। এ সময় ইহুদিদের সশস্ত্র দলগুলো ব্রিটিশ সৈন্যদের উপর ফিলিস্তিনের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানো শুরু করে। আরব-ইসরাইল যুদ্ধ কতবার হয়েছিল, কারা জয়ী হয়েছিল?

তখন ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনের উদ্দেশ্যে জাহাজে বোঝাই হয়ে আসা হাজার-হাজার ইহুদিদের বাধা দেয় ব্রিটিশ বাহিনী। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। ইহুদি সশস্ত্র দলগুলো ব্রিটিশ বাহিনীর উপর তাদের আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি পরিস্থিতির তৈরি করা যাতে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের জন্য ব্রিটেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়। তখন সমাধানের জন্য ব্রিটেনের উপর চাপ বাড়তে থাকে। এরপর বাধ্য হয়ে ব্রিটেন বিষয়টিকে জাতিসংঘে নিয়ে যায়।

১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে দু’টি রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ। একটি ইহুদিদের জন্য এবং অন্যটি আরবদের জন্য। ইহুদিরা মোট ভূখণ্ডের ১০ শতাংশের মালিক হলেও তাদের দেয়া হয় মোট জমির অর্ধেক। কিন্তু আরবদের জনসংখ্যা এবং জমির মালিকানা ছিল আরবদের দ্বিগুণ।স্বভাবতই আরবরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। তারা জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয়।


কিন্তু ফিলিস্তিনীদের ভূখণ্ডে তখন ইহুদিরা বিজয় উল্লাস শুরু করে। অবশেষে ইহুদিরা একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেল। কিন্তু আরবরা অনুধাবন করেছিল যে কূটনীতি দিয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না। জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্তের পর আরব এবং ইহুদিদের মধ্যে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। তখন ফিলিস্তিনী ভূখণ্ড ছেড়ে যাবার জন্য ব্রিটিশ সৈন্যরা দিন গণনা করছিল।


তখন ইহুদিদের সশস্ত্র দলগুলো প্রকাশ্যে আসা শুরু করে। তাদের গোপন অস্ত্র কারখানাও ছিল।
কিন্তু ইহুদিদের সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল তাদের বিচক্ষণ নেতৃত্ব। এর বিপরীতে আরবদের কোন নেতৃত্ব ছিলনা। ইহুদীরা বুঝতে পেরেছিল যে নতুন রাষ্ট্র গঠনের পর আরবরা তাদের ছেড়ে কথা বলবে না। সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য আগে থেকেই তৈরি ছিল ইহুদিরা। কিন্তু আরব কিংবা ইহুদি- কোন পক্ষই সেটি মেনে নেয়নি। ফলে জেরুজালেম শহরের নিয়ন্ত্রণের জন্য দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল।

জেরুজালেমে বসবাসরত ইহুদীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিল আরবরা। অন্য জায়গার সাথে জেরুজালেমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ইহুদীরা আরবদের উপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। অনেক বিশ্লেষক বলেন, তখন ইহুদীরা আরবদের নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করেছিল। যেহেতু আরবদের মধ্যে কোন সমন্বয় ছিল না সেজন্য ইহুদিরা একের পর এক কৌশলগত জায়গা দখল করে নেয়। তখন ফিলিস্তিনের একজন নেতা আল-হুসেইনি সিরিয়া গিয়েছিলেন অস্ত্র সহায়তার জন্য।

কিন্তু সিরিয়া সরকার ফিলিস্তিনদের সে সহায়তা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সেখান থেকে ফিরে এসে আল হুসেইনি আবারো যুদ্ধে নামেন। এর কয়েকদিন পরেই তিনি নিহত হন। ইহুদিরা যখন তাদের আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাস নাগাদ বহু ফিলিস্তিনী আরব তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।ইহুদি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর নৃশংসতা আরবদের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়।

অন্যদিকে ফিলিস্তিনী সশস্ত্র দলগুলো ইহুদিদের উপর কয়েকটি আক্রমণ চালায়। কিন্তু ইহুদিদের ক্রমাগত এবং জোরালো হামলার মুখে ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে ফিলিস্তিনীরা। তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। অন্যদিকে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ এবং অন্য আরব দেশগুলোর সরকার তাদের নিজ দেশের ভেতরে চাপে পড়ে যায়।

১৯৪৮ সালের ১৪ই মে ফিলিস্তিন ছেড়ে চলে যায় ব্রিটেন। একই দিন তৎকালীন ইহুদি নেতারা ঘোষণা করেন যে সেদিন রাতেই ইহুদি রাষ্ট্রের জন্ম হবে। ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের এক ঘন্টার মধ্যেই আরবরা আক্রমণ শুরু করে। একসাথে পাঁচটি আরব দেশ ইসরায়েলকে আক্রমণ করে। আরব-ইসরাইল যুদ্ধ কতবার হয়েছিল, কারা জয়ী হয়েছিল?


যেসব দেশ একযোগে ইসরায়েলকে আক্রমণ করেছিল তারা হচ্ছে – মিশর, ইরাক, লেবানন, জর্ডান এবং সিরিয়া। তাদের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ত্রিশ হাজারের মতো। অন্যদিকে ইসরায়েলের সৈন্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ হাজার।
কিন্তু আরব দেশগুলোর মধ্যে কোন সমন্বয় ছিলনা। তাছাড়া আরব নেতৃত্ব একে অপরকে বিশ্বাস করতো না। জেরুজালেম দখলের জন্য আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে চলছে তীব্র লড়াই। ইহুদিরা ভাবছিল জেরুজালেম ছাড়া ইহুদি রাষ্ট্রের কোন অর্থ নেই। অন্যদিকে মুসলমানদের জন্যও জেরুজালেম পবিত্র জায়গা।

তীব্র লড়াইয়ের এক পর্যায়ে ইসরায়েলি বাহিনী পিছু হটতে থাকে তাদের অস্ত্রের মজুত শেষ হয়ে যায়। সম্ভাব্য পরাজয় আঁচ করতে পেরে ইহুদিরা নিজেদের শক্তি সঞ্চয়ের জন্য সময় নেয়। আর কিছুদূর অগ্রসর হলেই মিশরীয় বাহিনী তেল আবিবের দিকে অগ্রসর হতে পারতো।

তখন জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। যুদ্ধবিরতির সময় দু’পক্ষই শক্তি সঞ্চয় করে। কিন্তু ইসরায়েল বেশি সুবিধা পেয়েছিল। তখন চেকোস্লোভাকিয়ার কাছ থেকে আধুনিক অস্ত্রের চালান আসে ইসরায়েলের হাতে। যুদ্ধ বিরতী শেষ হলে নতুন করে আরবদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। একর পর এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে নেয় ইহুদিরা। এবং তেল আবিব ও জেরুজালেমের উপর তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়।

জাতিসংঘের মাধ্যমে আরেকটি যুদ্ধ বিরতির মাধ্যমে সে সংঘাত থামে। ইসরায়েলী বাহিনী বুঝতে পরে তারা স্বাধীনতা লাভ করছে ঠিকই কিন্তু লড়াই এখনো থামেনি। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৯৪৯ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ছয় হাজার ইহুদি নিহত হয়েছিল। ইহুদিরা মনে করে তারা যদি সে যুদ্ধে পরাজিত হতো তাহলে আরবরা তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতো।ইসরায়েলিরা মনে করেন ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ সেভাবে দু’টি দেশের স্বীকৃতি দিয়েছিল, সেটি যদি ফিলিস্তিনীরা মেনে নিতো তাহলে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল নামের দুটি দেশ এখন পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ অবস্থান করতো।


আরব দেশগুলোর মধ্যে পারষ্পরিক আস্থা না থাকার কারণেই ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়েছে এবং ইসরায়েল দেশটির জন্ম হয়ে সেটি স্থায়ী হতে পেরেছে। অনেক ঐতিহাসিক বিষয়টিকে এভাবেই দেখেন। ১৯৪৮ সালের পর থেকে সামরিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অতি দ্রুত উন্নতি লাভ করে ইসরায়েল। তারা সুপার পাওয়ার হিসেবে আবির্ভূত হয়।

১৯৬৭–১৯৭০ সনের উল্লেখযোগ্য অভিযান সমূহ বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হল:

১৯৬৭ সালের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধে আরবদের শোচনীয় পরাজয়েরও পর আরব–ইসরায়েলি সংঘাত সমাধান করার কোনো বাস্তবিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হয় নি। ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরে আরব রাষ্ট্রসমূহ খার্তুম ঘোষণার মাধ্যমে তিন ‘না’-এর নীতি অনুসরণ করে এবং ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপন, স্বীকৃতি প্রদান ও সমঝোতা থেকে বিরত থাকে। মিশরীয় রাষ্ট্রপতি জামাল আব্দুন নাসের বিশ্বাস করতেন যে, কেবল সামরিক বল প্রয়োগের মাধ্যমেই ইসরায়েলকে সিনাই উপদ্বীপ থেকে সৈন্য প্রত্যাহারে বাধ্য করা সম্ভব। ফলে শীঘ্রই সুয়েজ খাল বরাবর সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। আরব-ইসরাইল যুদ্ধ কতবার হয়েছিল, কারা জয়ী হয়েছিল?

প্রথমদিকে এসব সংঘর্ষ গোলন্দাজ বাহিনীর দ্বন্দ্ব এবং ক্ষুদ্রমাত্রার অনুপ্রবেশ অভিযানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু ১৯৬৯ সালের দিকে মিশরীয় সেনাবাহিনী বড়মাত্রার অভিযানের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত মনে করতে থাকে। ১৯৬৯ সালের ৮ মার্চ নাসের আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘ক্ষয়কারক যুদ্ধ’ ঘোষণা করেন। এই যুদ্ধের বৈশিষ্ট্য ছিল সুয়েজ খাল বরাবর গোলাবর্ষণ, ব্যাপক হারে আকাশযুদ্ধ এবং কমান্ডো হামলা। ১৯৭০ সালের আগস্ট পর্যন্ত সংঘর্ষ চলতে থাকে। এরপর সীমান্তের কোনোরূপ পরিবর্তন কিংবা শান্তি স্থাপনের কোনো দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যতীতই যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরিত হয় এবং সংঘর্ষের অবসান ঘটে।

আসুন বিস্তারিতভাবে জেনে অভিযানগুলোকে :

১ জুলাই ১৯৬৭: একটিমিশরীয় কমান্ডো বাহিনী পোর্ট ফুয়াদ থেকে দক্ষিণে অগ্রসর হয় এবং রাস এল ‘ইশে অবস্থান নেয়। অঞ্চলটি সুয়েজ খালের পূর্ব তীরে পোর্ট সৈয়দ থেকে ১০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত। ১৯৬৭ সালের ৯ জুনের যুদ্ধবিরতির সময় থেকে অঞ্চলটি ইসরায়েলিদের দখলে ছিল। একটি ইসরায়েলি আর্মার্ড পদাতিক কোম্পানি মিশরীয় কমান্ডোদের আক্রমণ করে। সংঘর্ষে ১ জন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়, কিন্তু মিশরীয় বাহিনীটি পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে ভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, পোর্ট ফুয়াদে একটি ইসরায়েলি আক্রমণ মিশরীয়রা প্রতিহত করে দেয়।

২ জুলাই ১৯৬৭: ইসরায়েলি বিমানবাহিনী রাস এল ‘ইশে কমান্ডোদের সহায়তাকারী মিশরীয় গোলন্দাজ বাহিনীর অবস্থানের ওপর বোমাবর্ষণ করে।

৪ জুলাই ১৯৬৭: মিশরীয় বিমানবাহিনী সিনাইয়ে বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুর ওপর বিমান হামলা চালায়। ইসরায়েলিরা একটি মিশরীয় মিগ-১৭ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে।

৮ জুলাই ১৯৬৭: এল-কানাত্রায় একটি পর্যবেক্ষণ অভিযান পরিচালনার সময় ইসরায়েলি বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী মিশরীয় বিমানবাহিনীর একটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করে। এরপর মিশরীয়রা ক্যামেরাসজ্জিত দুইটি এসইউ-৭ প্রেরণ করে এবং বিমান দুইটি কোনো বাধার মুখোমুখি না হয়েই পর্যবেক্ষণ অভিযানটি সম্পন্ন করে। কয়েক ঘণ্টা পরে আরেকটি পর্যবেক্ষণ অভিযানে প্রেরিত অন্য দুইটি এসইউ-৭ বিমান ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়, এবং একটি এসইউ-৭ ভূপাতিত হয়।

১১–১২ জুলাই ১৯৬৭: রুমানি উপকূলের যুদ্ধ – আইএনএস এইলাত নামক ইসরায়েলি নৌবাহিনীর একটি ডেস্ট্রয়ার ও ২টি টর্পেডো বোট রুমানি উপকূলের নিকটে দুইটি মিশরীয় টর্পেডো বোটকে ডুবিয়ে দেয়। মিশরীয় টর্পেডো বোটগুলোর কোনো ক্রু বাঁচতে পারে নি, এবং অন্যদিকে ইসরায়েলিদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয় নি।

১৪ জুলাই ১৯৬৭: সুয়েজ খালের নিকটে মিশরীয় ও ইসরায়েলিদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণ এবং বিমানযুদ্ধ হয়। ৭টি মিশরীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়।

১৫ জুলাই ১৯৬৭: একটি মিশরীয় মিগ-২১ যুদ্ধবিমান ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর একটি মিরেজ ৩ যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করে।

২১ অক্টোবর ১৯৬৭: মিশরীয় নৌবাহিনী জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে ইসরায়েলি ডেস্ট্রয়ার আইএনএস এইলাতকে ডুবিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ৪৭ জন ইসরায়েলি নাবিক নিহত হয়।

অক্টোবর ১৯৬৭: আইএনএস এইলাত ধ্বংসের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ইসরায়েলি গোলন্দাজ বাহিনী সুয়েজের নিকটবর্তী মিশরীয় তেল সংশোধনাগার এবং ডিপোগুলোর ওপর গোলাবর্ষণ করে। অক্টোবরব্যাপী কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণের ফলে বেশকিছু বেসামরিক মিশরীয় নিহত হন। মিশরীয় কর্তৃপক্ষ খাল অঞ্চল থেকে বহুসংখ্যক বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নেয়।

১৯৬৮সালের অভিযান সমূহ:

১৯৬৮ সালে কারামেহের যুদ্ধের পর জর্দানের রাজা হুসেইন একটি পরিত্যক্ত ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক পরীক্ষা করছেন১৯৬৮ সালের নভেম্বরে মিশরের রাষ্ট্রপতি নাসের সুয়েজ খালের নিকটে মিশরীয় বাহিনীর অবস্থান পর্যবেক্ষণ করছেন

২১ মার্চ ১৯৬৮: ইসরায়েলি বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর পিএলওর আক্রমণের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ইসরায়েল জর্দানের কারামেহ শহর আক্রমণ করে। শহরটিতে পিএলও-এর একটি বড় ঘাঁটি ছিল। এই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল কারামেহের পিএলও ঘাঁটিটির ধ্বংসসাধন এবং ইয়াসির আরাফাতকে বন্দি কর। আক্রমণকারী ইসরায়েলি বাহিনীর বিশালত্ব দেখে জর্দান সরকার ধারণা করে যে, গোলান মালভূমির অনুরূপ একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য ইসরায়েল জর্দানের বালকা প্রদেশ দখলের পরিকল্পনা করছে। আরব-ইসরাইল যুদ্ধ কতবার হয়েছিল, কারা জয়ী হয়েছিল?

ইসরায়েলিদের ধারণা ছিল যে, জর্দানিরা এই আক্রমণ উপেক্ষা করবে। কিন্তু জর্দানি সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের পাশাপাশি যুদ্ধ করে এবং তাদের ব্যাপক গোলাবর্ষণের ফলে ইসরায়েলিদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই সংঘর্ষের সময় ফিলিস্তিনিরা প্রথমবারের মতো আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীদের ব্যবহার করে। সারাদিন যুদ্ধের পর ইসরায়েলিরা পশ্চাৎপসরণে বাধ্য হয়। অবশ্য পশ্চাৎপসরণের সময় তারা প্রায় ১৪১ জন ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে বন্দি করে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। উভয়পক্ষই এই যুদ্ধে নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করে, কিন্তু যুদ্ধে ইসরায়েলিদের তুলনামূলক বেশি ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হতবাক হয়।

জুন ১৯৬৮: আনুষ্ঠানিকভাবে” যুদ্ধ শুরু হয়, এবং মিশরীয়রা সুয়েজ খালের পূর্ব তীরে ইসরায়েলি ঘাঁটিগুলোর ওপর বিক্ষিপ্ত গোলাবর্ষণ আরম্ভ করে। পরবর্তী মাসগুলোতে আরো বেশি গোলাবর্ষণের ফলে ইসরায়েলিদের কিছু সৈন্য হতাহত হয়।

৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৮: মিশরীয় গোলাবর্ষণের ফলে ১০ জন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত এবং ১৮ জন আহত হয়। প্রত্যুত্তরে ইসরায়েল সুয়েজ ও ইসমাইলিয়ায় গোলাবর্ষণ করে।

৩০ অক্টোবর ১৯৬৮: ইসরায়েলি কমান্ডোরা একটি বিশেষ অভিযান চালিয়ে একটি মিশরীয় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার, নীলনদের দুইটি বাঁধ এবং একটি সেতু ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে সৃষ্ট বিদ্যুৎ সঙ্কটের ফলে নাসের কয়েক মাসের জন্য আক্রমণ বন্ধ করতে বাধ্য হন। এই সময়ে ইসরায়েলিরা তাদের শত শত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুর আশেপাশে সুরক্ষাবেষ্টনী নির্মাণ করে। এছাড়া, সুয়েজ খালের পূর্ব তীরে বার লেভ লাইন নির্মাণের মাধ্যমে ইসরায়েল অঞ্চলটিতে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করে।

৩ নভেম্বর ১৯৬৮: মিশরীয় মিগ-১৭ যুদ্ধবিমানের একটি বহর ইসরায়েলি অবস্থানের ওপর বোমাবর্ষণ করে এবং ইসরায়েলি বিমানবহরের মুখোমুখি হয়। বিমানযুদ্ধে একটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১ ডিসেম্বর ১৯৬৮: ইসরায়েলি কমান্ডোরা জর্দানের রাজধানী আম্মানের নিকটে ৪টি সেতু ধ্বংস করে।

৩ ডিসেম্বর ১৯৬৮: ইসরায়েলি বিমানবাহিনী জর্দানের পিএলও ঘাঁটিগুলোর ওপর বোমাবর্ষণ করে। রাজকীয় জর্দানি বিমানবাহিনীর হকার হান্টার যুদ্ধবিমানগুলো ইসরায়েলি বিমানবহরের মুখোমুখি হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংক্ষিপ্ত এই বিমানযুদ্ধে একটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১৯৬৯ সালের অভিযান সমূহ :

৮ মার্চ ১৯৬৯: মিশর ইসরায়েলের বার লেভ লাইনের ওপর গোলাবর্ষণ করে ও বিমান হামলা চালায়, এর ফলে প্রচুর ইসরায়েলি সৈন্য হতাহত হয়। প্রত্যুত্তরে ইসরায়েল মিশরের গভীরে আক্রমণ চালায় ও মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে।

৯ মার্চ ১৯৬৯: সুয়েজ খাল বরাবর যুদ্ধাঞ্চল পরিদর্শনকালে মিশরীয় সেনাবাহিনীর চীফ অফ স্টাফ জেনারেল আব্দুল মুনিম রিয়াদ ইসরায়েলি মর্টার হামলায় নিহত হন।

মে–জুলাই ১৯৬৯: মিশরীয় ও ইসরায়েলি সৈন্যদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষে ৪৭ জন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত এবং ১৫৭ জন আহত হয়। মিশরীয় সৈন্যদের হতাহতের সংখ্যা হয় আরো অনেক বেশি।

১৮ জুলাই ১৯৬৯: মিশরীয় কমান্ডোরা সিনাইয়ে ইসরায়েলি সামরিক স্থাপনাগুলোতে আক্রমণ চালায়।

১৯–২০ জুলাই ১৯৬৯: ইসরায়েলি কমান্ডোরা মিশরের গ্রিন আইল্যান্ডে আক্রমণ চালায় এবং সেখানকার মিশরীয় স্থাপনা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। এ ঘটনায় ৬ জন ইসরায়েলি এবং ৮০ জন মিশরীয় সৈন্য নিহত হয়। মিশরীয়দের গোলাবর্ষণের ফলেই তাদের নিজেদের বেশকিছু সৈন্য হতাহত হয়।

২০–২৮ জুলাই ১৯৬৯: প্রায় সমগ্র ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সুয়েজ খালের উত্তর ভাগ আক্রমণ করে, মিশরীয় বিমান-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ট্যাঙ্ক ও আর্টিলারি ধ্বংস করে এবং ৮টি মিশরীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। এই আক্রমণে প্রায় ৩০০ মিশরীয় সৈন্য নিহত হয়, এবং মিশরীয় সামরিক অবস্থানসমূহের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ইসরায়েলিরা ২টি যুদ্ধবিমান হারায়। এই আক্রমণের ফলে ইসরায়েলিদের ওপর মিশরীয়দের গোলাবর্ষণ কিছুটা হ্রাস পায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও মিশরীয়রা হালকা অস্ত্রশস্ত্র, বিশেষত মর্টার দিয়ে ইসরায়েলিদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখে।

আগস্ট ১৯৬৯: ইসরায়েলি বিমানবাহিনী মিশরের বিরুদ্ধে প্রায় ১,০০০টি বিমান হামলা চালায়, এবং মিশরের অসংখ্য স্যাম সাইট ধ্বংস করে দেয়। বিমানযুদ্ধে ২১টি মিশরীয় এবং ৩টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়।

৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯: ইসরায়েলি নৌ কমান্ডোরা একজোড়া মিশরীয় টর্পেডো বোট ডুবিয়ে দেয়। এরপর ইসরায়েলি বাহিনী মিশরের লোহিত সাগর উপকূলে আক্রমণ চালায়। ইসরায়েলিদের একটি বিস্ফোরক আকস্মিকভাবে বিস্ফোরিত হলে ৩ জন ইসরায়েলি কমান্ডো নিহত হয়। আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ইতিহাস

ইসরায়েলি সেনা ও বিমানবাহিনী মিশরীয় আর্মার দখর করে, এবং ১২টি মিশরীয় সেনাঘাঁটি ধ্বংস করে। এই আক্রমণে ১০০–২০০ মিশরীয় সৈন্য হতাহত হয়, এবং একজন সোভিয়েত জেনারেলও (যিনি মিশরীয় সেনাবাহিনীতে সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত ছিলেন) প্রাণ হারান। অন্যদিকে, ১ জন ইসরায়েলি সৈন্য সামান্য আহত হয়। আক্রমণটির সময় ১টি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত হয়, এবং বিমানটির পাইলট নিখোঁজ থেকে যায়।

১১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯: ১৬টি মিশরীয় যুদ্ধবিমান ইসরায়েলিদের ওপর আক্রমণ চালায়। ইসরায়েলি মিরেজ যুদ্ধবিমানসমূহ ৮টি মিশরীয় মিগ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে, এবং আরো ৩টি মিশরীয় এসইউ-৭ যুদ্ধবিমান ইসরায়েলি বিমান-বিধ্বংসী কামান ও হক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয়।

১৭ অক্টোবর ১৯৬৯: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সংঘর্ষটি সমাপ্ত করার জন্য আলোচনা আরম্ভ করে।

৯ ডিসেম্বর ১৯৬৯: মিশরীয় বিমানবাহিনী সদ্যপ্রাপ্ত পি-১৫ রাডারের সাহায্যে ইসরায়েলিদেরকে একটি বিমানযুদ্ধে পরাজিত করে এবং ২টি ইসরায়েলি মিরেজ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। একই দিন সন্ধ্যায় লেফটেন্যান্ট আহমেদ আতেফ চালিত একটি মিশরীয় ফাইটার বিমান একটি ইসরায়েলি এফ-৪ ফ্যান্টম ২ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। লেফটেন্যান্ট আতেফ প্রথম মিশরীয় পাইলট যিনি যুদ্ধে একটি এফ-৪ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করতে সক্ষম হন। একই দিনে ‘রজার্স পরিকল্পনা’ প্রকাশিত হয়।

এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সিনাই উপদ্বীপ থেকে ইসরায়েলি সৈন্য প্রত্যাহারের পরিবর্তে মিশরকে শান্তি স্থাপনের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু উভয় পক্ষই তীব্রভাবে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। নাসের ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের সরাসরি আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানান।

নাসের তার বহু ভাষণ ও বক্তব্যে এটি স্পষ্ট করে দেন যে, ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো ধরনের সরাসরি শান্তি আলোচনা তার নিকট আত্মসমর্পণের নামান্তর। এর পরিবর্তে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ প্রতিহত করার জন্য নাসের সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে আরো উন্নত অস্ত্রশস্ত্র লাভের জন্য আবেদন করেন। সোভিয়েতরা প্রথমদিকে অস্ত্র সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানায়।

২৬–২৭ ডিসেম্বর ১৯৬৯: ইসরায়েল মিশরের অভ্যন্তরে ছত্রীসেনা নামায়। ইসরায়েলি ছত্রীসেনারা রাস ঘারিবে একটি মিশরীয় পি-১২ রাডার দখল করে এবং ২টি সিএইচ-৫৩ সি স্ট্যালিয়ন হেলিকপ্টারে করে ইসরায়েলে নিয়ে যায়। এর ফলে ইসরায়েলি ও মার্কিনরা সর্বাধুনিক সোভিয়েত রাডার প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে সক্ষম হয়। এই অভিযানটি মিশরীয়দের মনোবলে মারাত্মক চিড় ধরিয়ে দেয়।

১৯৭০ সনের উল্লেখযোগ্য অভিযানসমূহ:

২২ জানুয়ারি ১৯৭০: মিশরের রাষ্ট্রপতি নাসের পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য গোপনে মস্কোয় যান। ৩এম৯ কুব এবং স্ট্রেলা-২সহ সর্বাধুনিক ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র মিশরকে সরবরাহ করার জন্য নাসের অনুরোধ সোভিয়েত সরকার রক্ষা করে। কিন্তু এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের জন্য দক্ষ সৈন্য ও রক্ষা করার জন্য কয়েক স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন ছিল।

এজন্য নাসেরের প্রচুরসংখ্যক সোভিয়েত সৈন্যের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সোভিয়েত সরকার মিশরে সৈন্য প্রেরণ করতে আগ্রহী ছিল না। তখন নাসের পদত্যাগ করার হুমকি দেন এবং ভবিষ্যতে মিশর সহযোগিতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী হবে বলে ইঙ্গিত করেন। সোভিয়েতরা মিশরে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছিল, এজন্য সোভিয়েত নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভ শেষ পর্যন্ত নাসেরের অনুরোধ রক্ষা করেন। মিশরে সোভিয়েত সৈন্যসংখ্যা ২,৫০০–৪,০০০ থেকে ১০,৬০০–১২,১৫০-এ উন্নীত করার এবং একই সঙ্গে ১০০–১৫০ জন সোভিয়েত পাইলট প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ইতিহাস

২২ জানুয়ারি ১৯৭০: ইসরায়েলি ছত্রীসেনা ও কমান্ডোরা শাদওয়ান দ্বীপে অবতরণ করে। এরপর ইসরায়েলি ও মিশরীয়দের মধ্যে সংঘর্ষে ৭০ জন মিশরীয় সৈন্য নিহত ও ৬২ জন বন্দি হয়, অন্যদিকে ৩ জন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত ও ৭ জন আহত হয়। ইসরায়েলি সৈন্যরা একটি মিশরীয় রাডার ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম দখল করে ইসরায়েলে নিয়ে যায়। অভিযানটি চলাকালে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর আক্রমণে ২টি মিশরীয় পি-১৮৩ টর্পেডো বোট ডুবে যায়।

ফেব্রুয়ারি ১৯৭০: একটি মিশরীয় কমান্ডো দল মিতলা গিরিপথে ইসরায়েলি সৈন্যদের ওপর চোরাগোপ্তা আক্রমণের চেষ্টা করে, কিন্তু ধরা পড়ে যায়। দলটির সকল সদস্য নিহত অথবা বন্দি হয়।

৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০: এইলাত বন্দরে মিশরীয় নৌ কমান্ডোদের আক্রমণে কয়েকটি ইসরায়েলি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০: মিশরীয় ও ইসরায়েলিদের মধ্যে একটি বিমানযুদ্ধ সংঘটিত হয়, এবং এতে উভয়পক্ষের ১টি করে যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়।

১৫ মার্চ ১৯৭০: মিশরে প্রথম কার্যক্ষম স্যাম সাইট নির্মিত হয়। এটি মিশরে প্রেরিত সোভিয়েত ইউনিয়নের ৩টি ব্রিগেডের অংশ ছিল। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানসমূহ সিনাইয়ে মিশরীয় অবস্থানগুলোর ওপর বারবার বোমাবর্ষণ করে।

৮ এপ্রিল ১৯৭০: ইসরায়েলি বিমানবাহিনী মিশরীয় সামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর বিমান হামলা চালায়। সুয়েজ খাল থেকে ৩০ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থিত বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটির ওপর বোমাবর্ষণ করা হয়। এছাড়া ইসরায়েলিরা ভ্রান্তিবশত মিশরের বাহর এল-বকর শহরের একটি স্কুলের ওপর বোমাবর্ষণ করে। ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের ফলে স্কুলটির ৪৬ জন শিক্ষার্থী নিহত ও ৫০ জনের বেশি আহত হয়।

এই ঘটনার ফলে ইসরায়েলের এই ধরনের অভিযানের অবসান ঘটে, এবং ইসরায়েলিরা সুয়েজ খালের নিকটবর্তী স্থাপনাগুলোর ওপর মনোযোগ দেয়। এই ফাঁকে মিশরীয়রা খালের নিকটে স্যাম ব্যাটারিগুলো পুনর্নির্মাণের সুযোগ পায়। সোভিয়েত পাইলটদের দ্বারা চালিত মিগ যুদ্ধবিমান বহর প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদান করে। ১৯৭০ সালের এপ্রিলের দিকে সোভিয়েত পাইলটরা ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলোকে আক্রমণ করতে শুরু করে, কিন্তু ইসরায়েলি পাইলটদের ওপর সোভিয়েত যুদ্ধবিমানগুলোকে আক্রমণ না করার নির্দেশ থাকায় ইসরায়েলি পাইলটরা পাল্টা আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকে।

এপ্রিল ১৯৭০: কুয়েতি সশস্ত্রবাহিনী মিশরীয় ফ্রন্টে প্রথম ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

মে ১৯৭০: মাসটির শেষদিকে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী পোর্ট সৈয়দের ওপর বড় ধরনের আক্রমণ চালায়। ১৬ তারিখে একটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান একটি ইসরায়েলি বিমানকে ভূপাতিত করে।

৩ মে ১৯৭০: জর্দানে ইসরায়েলি সৈন্যদের আক্রমণে ২১ জন ফিলিস্তিনি গেরিলা নিহত হয়।

জুন ১৯৭০: সিরীয় সামরিক অবস্থানগুলোর ওপর ইসরায়েলি আর্মার্ড আক্রমণের ফলে কয়েক শত সিরীয় সৈন্য হতাহত হয।

২৫ জুন ১৯৭০: সুয়েজ খাল অঞ্চলে মিশরীয় বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালানোর সময় একটি ইসরায়েলি এ-৪ স্কাইহক যুদ্ধবিমানকে একজোড়া সোভিয়েত মিগ-২১ বিমান পশ্চাদ্ধাবন করে এবং ইসরায়েলি বিমানটি ভূপাতিত হয়।

২৭ জুন ১৯৭০: মিশরীয় বিমানবাহিনী খাল অঞ্চল জুড়ে বিমান হামলা অব্যাহত রাখে। ২৭ জুন ৮টি মিশরীয় এসইউ-৭ এবং মিগ-২১ যুদ্ধবিমান সিনাইয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। ২টি মিশরীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়। একটি ইসরায়েলি মিরেজ যুদ্ধবিমানও ধ্বংস হয়, এবং বিমানটির পাইলট বন্দি হয়। আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ইতিহাস

জুন ১৯৭০: মিশরীয় ফ্রন্টে সংঘর্ষে ১৬ জন কুয়েতি সৈন্য নিহত হয়।

১৮ জুন ১৯৭০: মিশরে একটি ইসরায়েলি বিমান হামলায় বেশকিছু সোভিয়েত সৈন্য হতাহত হয়।

৩০ জুন ১৯৭০: সোভিয়েত আকাশ-প্রতিরক্ষা বাহিনীর সৈন্যরা ২টি ইসরায়েলি এফ-৪ ফ্যান্টম যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। দুইজন ইসরায়েলি পাইলট ও একজন নেভিগেটর বন্দি হয়, অন্যদিকে আরেকজন নেভিগেটরকে পরের দিন রাতে ইসরায়েলি হেলিকপ্টার উদ্ধার করে।

৩০ জুলাই ১৯৭০: সুয়েজ খালের পশ্চিমে ইসরায়েলি ও সোভিয়েতদের মধ্যে একটি বড় ধরনের বিমানযুদ্ধ হয়। ইসরায়েলিরা ৪টি সোভিয়েত যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে, এবং আরেকটি সোভিয়েত যুদ্ধবিমান ফেরার সময় বিধ্বস্ত হয়। ৪ জন সোভিয়েত পাইলট নিহত হয়। অন্যদিকে, একটি ইসরায়েলি মিরেজ যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সোভিয়েতরা পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে ২টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেএবং মিশরে আরো বেশিসংখ্যক যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক সরাসরি ইসরায়েল আক্রমণের আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংঘর্ষটির শান্তিপূর্ণ সমাপ্তির লক্ষ্যে দ্বিগুণ উদ্যমে কূটনৈতিক তৎপরতা আরম্ভ করে। আগস্ট ১৯৭০: সোভিয়েত ও মিশরীয়রা সুয়েজ খালের নিকটে বিমান-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করতে সক্ষম হয়, এবং সোভিয়েতরা বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে।

স্যাম ব্যাটারিগুলোর সহায়তায় মিশরীয়রা তাদের আর্টিলারি বার লেভ লাইনের সন্নিকটে জড়ো করতে সক্ষম হয়, যা লাইনটিকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। ৭ আগস্ট ১৯৭০: একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতি রেখার ৫০ কি.মি. পূর্বে ও পশ্চিমে সামরিক অবস্থা পরিবর্তনে নিষেধ করা হয়।

যুদ্ধবিরতির কয়েক মিনিট পরই মিশর চুক্তি লঙ্ঘন করে অঞ্চলটিতে স্যাম ব্যাটারি স্থাপন করতে আরম্ভ করে। অক্টোবরের মধ্যে অঞ্চলটিতে প্রায় ১০০টি স্যাম সাইট স্থাপিত হয়।
২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭০: মিশরীয় রাষ্ট্রপতি নাসের মৃত্যুবরণ করেন, এবং উপ-রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাত তার স্থলাভিষিক্ত হন।

এবার আসুন বর্তমান অবস্থা জানার আগে কয়েকটি প্রতিবাদি শক্তিশালী দলের পরিচয় জেনে নেই,

হামাস:

এই প্রেক্ষাপটে হামাসের ইতিহাস, সাংগঠনিক দর্শন, আদর্শ এবং তাদের সংগ্রাম সম্পর্কে কিছুটা জেনে নেওয়া যাক…

যেভাবে হামাসের যাত্রা শুরু: মিশরের ইসলামী রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুড। দখলদার ইসরাইলিদের কাছে বাস্তুচ্যুত অনেক ফিলিস্তিনি মিশরে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ব্রাদারহুডের আদর্শে দীক্ষা নেন। ১৯৮৭ সালে এমনই দুজন আহমেদ ইয়াসিন ও আব্দেল আজিজ আল-রানতিসি প্রতিষ্ঠা করেন হামাস। হামাস হচ্ছে, হারকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া- এর সংক্ষেপ, যার অর্থ ইসলামী নবজাগরণের আন্দোলন।

হামাস শব্দের অর্থ– উদ্দীপনা, গভীর দেশপ্রেম। সাংগঠনিক সনদ অনুযায়ী, দখলদার ইসরাইলি রাষ্ট্রকে উৎখাত করে একটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করাই হামাসের লক্ষ্য। পরবর্তীতে অবশ্য সংগঠনটি বলেছে, ইসরাইল ১৯৬৭ সালের যুদ্ধপূর্ব সীমানায় ফিরে গেলে, অর্থাৎ ওই যুদ্ধের সময়ে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিলে এবং ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সেখানে ফিরতে দিলে তারা ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। কিন্তু, ইসরাইল এ প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেয়। দখলদার শক্তিটি ফিলিস্তিনের এক ইঞ্চি ভূমিও ছাড়তে রাজি নয়। আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ইতিহাস

হামাসের সাংগঠনিক কাঠামো, সমর্থন দেয় কারা: হামাসের প্রধান শাখা দুটি। এর একটি সাংস্কৃতিক, যার নাম দাওয়াহ। আরেকটি সামরিক শাখার নাম ইজ্জ আদদ্বীন আল-কাসসাম ব্রিগেডস। হামাসকে সমর্থন দিচ্ছে ইরান, এবং ইরান সমর্থিত সিরিয়ার সরকার ও লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। এই জোটের সদস্যরা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন নীতির ঘোর-বিরোধী।

হিজবুল্লাহ:

হিজবুল্লাহ কারা?,হিজবুল্লাহ একটি শিয়া সম্প্রদায়ের সংগঠন, যা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। লেবাননের সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এটি। এক প্রতিবেদনে হিজবুল্লাহ নিয়ে এমন কথাই বলেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। আর কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা বলছে, ‘হিজবুল্লাহ’ শব্দের মানে ‘আল্লাহর দল’।


বিবিসি বলছে, গত শতকের আশির দশকের প্রথম দিকে এই হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত হয়। মূলত এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী শিয়া সমর্থিত দেশ ইরানের মাধ্যমেই লেবাননে এই হিজবুল্লাহর আন্দোলন শুরু হয়। ইসরায়েলকে টেক্কা দিতেই এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারি গার্ডস কর্পসের মাধ্যমেই এর প্রতিষ্ঠা। লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় দেশটির দক্ষিণাঞ্চল নিজেদের দখলে নেয় হিজবুল্লাহ। ১৯৯২ সাল থেকেই দেশটির জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছে সংগঠনটি। লেবাননের প্রথম সারির রাজনৈতিক দল হিসেবেও এদের বিবেচনা করা হয়।

বর্তমান ইসরায়েল ও গাজার ইতিকথা :

ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ এক বছরে আরও বিস্তৃত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে: ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং এর জের ধরে গাজা যুদ্ধ শুরুর এক বছর পূর্ণ হলো। বছর শেষে সেই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে আর যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হয়েছে। ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণ ছিলো ইসরায়েলিদের জন্য ভয়াবহ একটি দিন। প্রায় বারশ মানুষ, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক, নিহত হয়েছিলো।

ঘটনার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ফোন করে বলেছিলেন যে, “আমরা আমাদের রাষ্ট্রের ইতিহাসে কখনো এ ধরনের বর্বরতা দেখিনি”। ইসরায়েলিরা হামাসের ওই হামলাকে তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেছিলো। এরপর ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ হামলা চালায় যাতে প্রায় ৪২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে তাদেরও বেশিরভাগ বেসামরিক নাগরিক। আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ইতিহাস


গাজার বড় অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং ফিলিস্তিন গণহত্যার অভিযোগ এনেছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। যুদ্ধ এরপর আরও ছড়িয়েছে। হামাসের হামলার ১২ মাস পর এসে মধ্যপ্রাচ্য এখন ভয়াবহ ও আরও ধ্বংসাত্মক একটি যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে।

গাজায় ভয়াবহ যুদ্ধ: গত বছর ডিসেম্বরে গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। গাজায় হামাসের ব্যবহৃত ৮০০টির মত “পটানেল” পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছিলো ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ। এর মধ্যে ৫০০টি ধ্বংস করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা। আর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন “সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে” প্রায় দশ হাজারের মত বিমান হামলা চালানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে আইডিএফ। এই যুদ্ধ গাজাকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে ইসরায়েলকে।

হামাস ও হেজবুল্লাহ নেতা নিহত :ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়ে ইসরায়েলি হামলায় ‘নিহত’ হওয়ার কথা সংগঠনটি জানায় ৩১শে জুলাই। ইরানের রাজধানী তেহরানে তার বাসস্থানে “জায়নবাদী গুপ্ত হামলায়” এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে তারা। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পর তাকে হত্যা করা হয়।

ইসমাইল আবদেল সালাম হানিয়ে, যার ডাক নাম আবু আল-আবদ, জন্মেছিলেন ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবিরে। তিনি হামাস আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান এবং ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ সরকারের দশম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।অন্যদিকে শেখ হাসান নাসরাল্লাহ হলেন একজন শিয়া ধর্মপ্রচারক, যিনি ১৯৯২ সাল থেকে লেবাননের ইরানপন্থী শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহ’র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

২৮শে অক্টোবর ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স দাবি করেছে যে বৈরুতে এক হামলায় হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে পহেলা অক্টোবর থেকে ইসরায়েল লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে স্থল অভিযান শুরু করেছে বলে জানায় তাদের ডিফেন্স ফোর্স আইডিএফ। যেসব জায়গায় হামলা হচ্ছে সেগুলো ইসরায়েলি কমিউনিটির জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করে তারা। আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ইতিহাস

ইসরায়েলে ইরানের সরাসরি হামলা : গত এপ্রিলে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলায় কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডারের মৃত্যুর ঘটনায় ইসরায়েলে ৩০০টির বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছিল ইরান। ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে এটিই ছিলো ইরানের প্রথম সরাসরি হামলা। সেসময় প্রায় সবগুলো ড্রোনই ভূপাতিত করেছিল ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের আরব মিত্ররা। ঐ হামলায় ইসরায়েলের একটি বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। জবাবে তখন ইরানের একটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।


এরপর চলতি মাসের শুরুতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে আবারো শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। মূলত হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর হত্যার জেরে এই হামলা করে ইরান। হামলার পর ইসরায়েলজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিস্ফারণের শব্দ শোনা গেছে এবং ইরানের মিসাইল নিক্ষেপের কথা জানিয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
তারা বলেছে, প্রায় ১৮০টি মিসাইল ছোড়া হয়েছে এবং অনেক মিসাইল ভূপাতিত করা হয়েছে, তবে মধ্য এবং দক্ষিণাঞ্চলে ‘কিছু আঘাতের’ ঘটনাও ঘটেছে। ইরানকে এই হামলার ‘পরিণাম ভোগ করতে হবে’ বলেও হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল।

লেবাননে ব্যাপক হামলা :হেজবুল্লাহ স্থাপনা লক্ষ্য করে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। পহেলা অক্টোবর হামলা শুরুর আগে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বৈরুতে শহরের তিনটি এলাকা থেকে স্থানীয় অধিবাসীদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।লেবাননের প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই বলেছেন এই হামলার কারণে অন্তত দশ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে। হেজবুল্লাহর ডেপুটি কমান্ডার নাইম কাসেম বলেছেন ইসরায়েলের স্থল অভিযানের জন্য তারা প্রস্তুত এবং এই যুদ্ধ ‘দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে’।

নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব : ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়েছে গত জুনে। প্রস্তাবে শর্ত হিসেবে রাখা হয়েছে “পরিপূর্ণ যুদ্ধবিরতি”, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি, মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ ফেরত দেয়া এবং ফিলিস্তিনি বন্দী বিনিময়। ইসরায়েল ইতোমধ্যে প্রস্তাবে সম্মত আছে বলে রেজল্যুশনে উল্লেখ করা হয়। হামাসকেও রাজি হতে তাগিদ দেয়া হয়েছে এতে। আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ইতিহাস

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলো ইউরোপের তিন দেশ : চলতি বছর মে মাসে ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউরোপের তিন দেশ- স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে। দেশগুলো বলেছে, তাদের এই স্বীকৃতি দেয়ার মানে হলো মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধের একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার প্রতি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করা। স্বীকৃতি দেয়া তিনটি দেশ তখন বলেছিলো যে তারা ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ-পূর্ব সীমানার ভিত্তিতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে যখন জেরুসালেমকে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন- উভয় দেশের রাজধানী হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।


ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের সদস্য পদ দেয়ার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব এই বছরের মে মাসে পাস হয়েছে সাধারণ পরিষদে। তবে এই বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে এখনো ভোটাভুটি হয়নি।

ফিলিস্তিনের পক্ষে আমেরিকায় বিক্ষোভ: চলতি বছর এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। পরে তা পঁচিশটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে।লস অ্যাঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া এবং আটলান্টায় বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করা হয় এ ঘটনায়।টেক্সাসের অস্টিনে সেখানকার গভর্নর ট্রুপারদের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীদের আটক করতে। Read English Articles

আল আকসা ও পবিত্ ভূমি রক্ষায় আমাদের করণীয়:

আবহমান কাল ধরে চলে আসছে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের উপর ভয়াবহ হামলা ও নির্যাতনের স্টিম রোলার যুগ যুগ ধরে আমেরিকার মদদপুষ্ট দখলদার, বর্বর, ইহুদী ইসরায়েলীরা হায়েনার মত ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাদের উপর।
এইতো গত কয়েকদিন আগের কথা, অসংখ্য নবী-রাসূলদের স্মৃতি ধন্য পূন্যভূমিতে বৃষ্টির মত বোমা বর্ষন হয়েছে।

বারি গোলা ও ক্ষেপানস্ত্রের আঘাতে রোজই অবলা নারী – শিশু সহ শত শত মুসলমান শাহাদাত বরন করেছে।সহায় সম্পদ সবকিছু ধ্বংস হয়েছে এমনকি বর্বদের হাত থেকে রেহাই পাইনি শিক্ষালয়, হাসপাতাল এমনকি মসজিদ, মাদ্রাসাও এক কথায় ফিলিস্তিন এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ।

এখনো যারা বেঁচে আছে তাদের চোখে শুধু মৃত্যুর আতঙ্ক, ধ্বংসের বিভীষিকা ।ফিলিস্তিন ইসলামী দেশ। ফিলিস্তিনিরা মুসলিম জাতি। তাই বিশ্ব বিবেক নির্লিপ্ত ও চুপ। জাতিসংঘ নির্বিকার, নেই কোন পদক্ষেপ। সারা বিশ্ব বসে বসে টেলিভিশনের পর্দায় ধ্বংসের দৃশ্য উপভোগ করছে।


আমার দুঃখ হয়: মুসলিম নেতৃবৃন্দের অবস্থা দেখে। তারা নীরব কেন? তাদের মুখে প্রতিবাদের ভাষা নেই কেন? মুসলিম বিশ্ব ও তাদের নেতারা কেন বজ্রের মতো গর্জন করে বলছে না, খবরদার! আমেরিকা, খবরদার!ইসরায়েল বন্ধ করো তোমার নারকীয় হামলা।অন্যথায় আমরা ও দাঁড়াবো গাজাও ফিলিস্তিনিদের পাশে। জিহাদ ঘোষণা করব তোমার বিরুদ্ধে। মুসলিম উম্মাহ তো এক দেহ এক প্রাণ। আরব-ইসরাইল যুদ্ধের ইতিহাস

দেহের কোন অংশ আক্রান্ত হলে গুটা দেহ তাকে রক্ষার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে।যুগে যুগে মুসলিমদের বহু রক্ত ঝরেছে খুনী ইসরায়েলীদের হাতে। কিন্তু এবার বড় শক্ত হাতে প্রতিরোধও করেছে হামাস ও অন্যান্য মোজাহিদীন। দিনে দিনে জমা হয়েছে অনেক ঋণ,ইনশাআল্লাহ এবার ঘনিয়ে এসেছে হিসাবের দিন। রক্তের প্রতিটি ফোটার হিসাব ইসরাইলকে দিতে হবে এবার, আজ, কিংবা আগামীকাল। সবাই মিলে এখন দোয়া কর- হে আল্লাহ, এটাই যেন হয় শেষ যুদ্ধ এ আগুনেই যেন জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাক আমেরিকাও অভিশপ্ত ইসরায়েল। আমিন- ইয়া রাব্বাল আলামীন। আরো লেখা পড়ুন

সংগ্রহে:– সাজিদুর রহমান।

লিখার সময় ৮অক্টোবর ২০২৪ইং

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button