HistoryOnubad Media

উসমান গাজীর সেরা ৫ জন সেনা

উসমান গাজীর সেরা ৫ জন সেনা

ইতিহাসের কোনো বীর আজ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি তার অন্যান্য সঙ্গী ছাড়া।  একজন বীরের সফলতার পিছনে থাকে তার শতো শতো সাহসী সৈনিকের অবদান। তবেই একজন বীরের নাম ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়। কিন্ত ঐ সমস্ত সাহসী সৈনিকদের ইতিহাস ইতিহাসের পাতায় খুব কমই স্থান পায়৷ আজ আমরা উসমান গাজীর সেরা পাঁচজন যোদ্ধা সম্পর্কে আলোচনা করবো।

 1/  বোরান আল্প:

তিনি ছিলেন উসমান গাজীর সবথেকে কাছের এবং প্রিয় বন্ধু।  তার সব গোপনীয়তা তিনি জানতেন এবং তার ব্যাক্তিগতো সহকারীও ছিলেন। উসমান গাজীর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। তিনি কতো সালে জন্ম গ্রহণ করেন তা জানা যায়নি।  তবে তিনি উসমান গাজীর সমবয়সী ছিলেন। তাঁর মা- বাবা সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি ধারণা করা তিনি ছোটবেলা থেকেই এতিম ছিলেন। 

তাঁর শৈশব কেটেছে কায়ী বসতিতে। তখন থেকেই তিনি উসমান গাজীর বন্ধু৷ উসমানী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার অবদান ছিলো অপরিসীম।  কারণ তিনি উসমাম গাজীর গোপনীয়তাগুলো ভালোভাবে রক্ষা করতেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন সাহসী বীর।  তিনি তীরন্দাজিতে অভিজ্ঞ ছিলেন। যুদ্ধে তিনি বেশীরভাগ তীরই ব্যাবহার করতেন। দাম্পত্য জীবনে তিনি গোঞ্জা খাতুনকে বিয়ে করেন। তার ঘরে কোনো সন্তান হয়নি। 

তার আগেই গোঞ্জা খাতুন শত্রুদের আক্রমণে শহীদ হন। এরপর তিনি আর বিয়ে করেছিলেন কিনা তা জানা যায়নি।  তবে গোঞ্জা খাতুনকে তিনি অনেক ভালোবাসতেন। তার মৃত্যুতে তিনি একদম ভেঙে পড়েন। এবং প্রায় অর্ধ পাগল হয়ে যান। উসমান গাজী শত্রুদের থেকে সেটার প্রতিশোধ নিয়ে নেন। তিনি উসমান গাজীর প্রতিটি বিজয়ে তার সাথে ছিলেন৷ ইনেগুল,বিলেজিক,মারমারাজিক,কিতা, আরো অকলনেকগুলো দুর্গ তিনি উসমান গাজীর সাথে জয় করেন। এবং প্রতিটি যুদ্ধে তিনি উসমান গাজীর সাথে ছিলেন। তবে ঐতিহাসিকভাবে তর ব্যাপারে খুবই কম তথ্য পাওয়া যায়। তিনি কতো সালে মৃত্যু বরণ করেন তাও জানা যায়নি। তবে তুরস্কে  তাঁর বানানো  মাজার আছে।

 2/ সমসা চাভুস:

তিনি ছিলেন উসমান গাজীর শক্তিশালী একজন যোদ্ধা।  তবে তিনি উসমান গাজীর বড় ছিলেন৷ আসলে সামসা চাভুস ছিলেন আরতুরুল গাজীর সৈনিক। তিনি এক বসতির প্রধান ছিলেন। তিনি কায়ীদের অধীনে ছিলেন। কারণ আরতুরুল গাজীর প্রতি তার ছিলো অগাধ বিশ্বাস।  আরতুরুল গাজীর মৃত্যুর পর তিনি তার ছেলে উসমান গাজির আনুগত্য করেন৷ তবে এটা বেশীদিন টিকেনি৷ তবে যে কয়দিন তিনি ছিলেন উসমান গাজীর বড় একটি শক্তি ছিলেন তিনি। এখানে একটা বিষয় জানা দরকার সেটা হলো দিরিলিস আরতুরুলের সামসা চাভুস আর কুরুলুস উসমানের সামসা চাভুস আসলে একজন।  

সামসা চাভুস আরতুরুল গাজীর পরও বেঁচে ছিলেন। এবং উসমান গাজির সঙ্গী ছিলেন। তাঁর জন্ম সাল কবে তা জানা যায়নি।  তনে তিনি ছিলেন বিশাল দেহের অধিকারী। এবং প্রচুর শক্তিশালী ছিলেন। তিনি উসমান গাজীর সাথে অনেকগুলো দুর্গ জয় করেন৷ এবং অনেকগুলো বছর তিনি উসমান গাজীর সাথে কাটান। 

তবে ঐতিহাসিকভাবে জান যায় উসমান গাজী রাগি ছিলেন।  আর সামসা চাভুসও ছিলেন রাগি মানুষ কোনো এক ঘটনার জের ধরে উভয়ের মধ্যে মনমালিন্য হয়। পরে সামসা চাভুস নিজ বসতি নিয়ে অন্য জায়গায় চলে যায়। তবে তিনি ১০/ ১২ বছর পর উসমান গাজী যখন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হিমশিম খাচ্ছিলন তখন তিনি আবার ফিরে আসেন।  এবং আমরণ উসমান গাজীর সাথে থাকেন। তাঁর বৈবাহিক জীবন সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। এমনকি তিনি কতো সালে মৃত্যু বরণ করেন তাও জানা যায়নি৷

  ৩/ গোকতুর্ক আল্প:

তিনি ছিলেন উসমান গাজীর বামহাত।  তিনি শক্তিশালী সৈন্যদের থেকে একজন ছিলেন যিনি যুদ্ধের ময়দানে বুকে ছয় থেকে সাতটা তীর খেয়েও দুর্গের ফটক খুলতে সক্ষম হন। তিনি কোনো এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন৷ কিন্তু ছোটবেলায়ই মোঙ্গলরা হামলা করে তাদের পুরো বসতি ধ্বংস করে দেয়। এবং তাকে বন্দি করে নিয়ে যয়। তার ভাই কনূুর আল্পে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এখানে একটা বিষয় জানা জরুরি তা হলো ঐতিহাসিক চরিত্রে কনূর আল্প একজনই ছিলো। এবং তার গালে একটি কাটা দাগ ছিলো। 

আমরা দেখি যে সিরিজে উভয় কনূর আল্পের গালে কিন্তু কাটা দাগ আছে৷ যদিও সিরিজে আলাদা দুটি চরিত্র দেখানো হয়েছে তবে তা সঠিক নয়। মোঙ্গলরা তাকে নাম দেয় “কোঙ্গার”।  তিনি তার অভিজ্ঞতার কারণে মোঙ্গলের কমান্ডার হন।

এবং তুর্কীদের উপর হামলা করার জন্য সোগুতে আসেন৷ কিন্তু এখানে আসার পর তার জীবনে অমূল পরিবর্তন হয়ে যায়৷ কনূর আল্প তাকে বুঝাতে সক্ষম হন যে তারা আপন ভাই এবং সে একজন জন্মগতো মুসলিম।  তাঁরও সব মনে পড়ে যায়। অবশেষে তিনি আবার ইসলাম গ্রহণ করেন।  এবং ইসলামের জন্য প্রাণ  নিবেদিত সৈনিক হয়ে যান। ইসলাম গ্রহণ করার পর তাঁর নাম হয় গোকতুর্ক আল্প। এরপর তিনি উসমান গাজীর সাথে প্রতিটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন৷ এবং সাহসীকতার সাথে লড়াই করেন। তিনি বিয়ে করতে পারেননি। তার আগেই মোঙ্গল কমান্ডার গেয়হাতু তাকে শহীদ করে দেয়।

৪/ চেরকুতাই আল্প:

চেরকুতায় আল্প কোথায় জন্ম গ্রহণ করে তা জানা যায়নি। তবে কোনে এক মোঙ্গল বসতিতে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন।  ছোটবেলাই তিনি তার পিতামাতাকে হারান। মোঙ্গলরা পিতামাতাহীন ছোট ছেলেদেরকে তাদেরকে নিয়ে কঠিন থেকে কঠিন যুদ্ধ প্রশিক্ষণ দেওয়াতো। চেরকুতাই আল্পের ব্যাপারেও এর বিপরীত ঘটেনি। তাকে ছোটবেলা থেকেই যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এবং তিনিও যুদ্ধের সব প্রশিক্ষণগুলো সুন্দরভাবে শিখে নেন। তাহলে বুঝা যায় অন্য আট-দশটি ছেলের মতো তার শৈশব কাটেনি।  মায়ের মমতা এবং বাবার আদর কি জিনিস তা তিনি শৈশবে দেখেননি। যার কারণে মঙ্গলদের মতই হিংস্র হয়ে উঠেন। 

বালগাইয়ের সেনা কমান্ডার ছিলো দুজন ; এক হলো চেরকুতা, দ্বিতীয় হলো কোঙ্গার( গোকতুর্ক).। উসমান গাজী যখন বালগাইকে পরজিত করে এবং বালগাই যুদ্ধে নিহত হয়, তখন চেরকুতাই একা হয়ে পড়ে।  সে পারছেনা গেইহাতুর কাছে যেতে, আর না পারছে এখানে থাকতে।  মোঙ্গলরা পরাজিত কোনো কমান্ডারকে দেখতে পারতনা সারা জীবন তাকে লাঞ্চনার স্বীকার হতে হতো। তাই চেরকুতাই দিশেহারা হয়ে উসমাম গাজীর সাথে চুক্তি করে যে সে তাকে সাহায্য করবে বিনিময়ে উসমান গাজী তাকে স্বর্ণমুদ্রা দিবে। 

এভাবেই সে অনেকদিন মুসলমানদের সংস্পর্শে থাকে, এবং মুসলমানদের রীতিনীতি দেখে। দিন যতই গড়াচ্ছিলো ততোই সে মুগ্ধ হচ্ছিলো। মুসলমানরা এতই ভালো এতই সুন্দর তাদের নিয়ম-নীতি ৷ এক পর্যায়ে সে ইসলাম গ্রহণ করে নেয়।  তিনি উসমান গাজির সাথে আরো অনেকগুলো দুর্গ জয় করেন এবং উসমান গাজির সাথে প্রত্যেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। 

যে সমস্ত দুর্গ জয়ে তিনি অবদান রাখেন; ইনেগুল, মারমারাজিক,ইয়েনিশহর, বিলেজিক, কিতা, এবং বুরসা বিজয়েও উরহানের সাথে থাকেন। চেরকুতাই আল্প কতে বছর বেঁচে ছিলেন তা নিশ্চিত করে যানা যায়নি। তবে তিনি অনেকদিন হায়াত পেয়েছেন। উসমান গাজীর মৃত্যুর অনেক বছর পর তিনি মৃত্যু বরণ করেন। এবং তাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে তাও নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে সোগুতে তাদের বানানো মাজার আছে।

৫/ কনূর আল্প:

তিনি ছিলেন উসমান গাজীর বিশ্বস্ত বন্ধু। তাদের বন্ধুত্ব এতোটাই গভীর ছিলো যে উসমান গাজী যখন বুরসা বিজয়ের কথা ব্যক্ত করেন।  তখন তিনি তা জয় করে নেওয়ার ওয়াদা করেন এবং ওরহান গাজির শাষনামলে বুরসা জয়ের সেনাপ্রধান ছিলেন তিনি। তিনি উসমান গাজীর জীবদ্দশায় কখনো তাকে একা ছাড়েননি। সবসময় তার পাশে থেকেছেন। 

 তিনি ছিলেন এমন এক সেনাপতি যার কাছে বড় বড় কমান্ডার ও গভর্নররা খুব খারাপভাবে পরাজিত হতো। তার বীরত্ব ছিলো সবার নিকট প্রসিদ্ধ।  তিনি যে সমস্ত অঞ্চলগুলো বিজয় করেছিলেন তার অনেকগুলোই তার নিজের অধীনে ছিলো। তার মৃত্যুর পর এ সব অঞ্চল শাহজাদা মুরাদকে দেওয়া হয় যিনি ওরহান গাজীর পর সুলতান হয়েছিলেন। visit us

কনূুর আল্পের জন্ম তারিখ সম্পর্কে ইতিহাসে কিছু লিখা হইনি। তবে এতটুকু  বলা হয়েছে যে,  তিনি উসমান গাজীর কিছুটা ছোট ছিলেন। অন্য  আট- দশটি ছেলের শৈশবের মতোই কেটেছে। শৈশব থেকেই উসমান গাজী এবং কনূর আল্পের মাঝে গভীর বন্ধুত্ব ছিলো। সোগুতে উসমান গাজী ও অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে তার শৈশব অতিবাহিত হয়। ঐতিহাসিক তথ্য মতে জানা যায়, কনূর আল্প এক যাযাবর সাহসী মেয়েকে বিবাহ করেন। এমনকি জানা যায় উসমান গাজির বিবাহের কয়েক দিন পরই নাকি কনূর আল্প বিবাহ করেন। তাদের তিনটি সন্তান জন্ম গ্রহণ করে।

কনূুর আল্প তার জীবদ্দশায় অনেকগুলো যুদ্ধ করেছেন প্রতিটা যুদ্ধেই তিনি বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ইনেগুল বিজয়ের সময় কঠিন বীরত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ঐতিহাসিক তথ্য মতে জানা যায় তিনি আব্দুর রহমান গাজী ও সামসা চাভুস, আকচাগোচার সাথে অনেকগুলো যুদ্ধ করেন এবং উসমানী সাম্রাজ্যের সীমানাকে অনেক দুর বিস্তৃত করেন। উল্লেখযোগ্য যেসব শহর তিনি জয় করেন; ইয়েনিশহর, আকিয়াস,কনূর শহর, ডুজস, সাকারিয়া, মুদুরনু, এবং মেলান বেসিন শহর এবং উসমান গাজির সাথে প্রতিটি যুদ্ধই তিনি অংশগ্রহণ করেন।

ঐতিহাসিকদের তথ্য মতে কনূুর আল্প ১৩২৮ সালে মৃত্যু বরণ করেন। এবং তাকে কোথায় দাফন করা হয়েছে এটা নিয়ে মতোভেদ রয়েছে।  তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে তাকো ডুজসে দাফন করা হয়েছে। এবং সোগুতে তার বানানো কবর রয়েছে প্রদশর্নের জন্য। Read more

লেখক: জায়েদ হাসান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button