খোলা কলামসম-সামীয়ক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুবাই নাকি ভারত?

শেখ হাসিনা দুবাই নাকি ভারত?

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রায় দুই মাস আগে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন টানা সাড়ে ১৫ বছরের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে মাত্র ৪৫ মিনিটের প্রস্তুতিতে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সুসম্পর্কের কারণে দেশটি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সাময়িক আশ্রয় দেয়। শেখ হাসিনা ভারতে সাময়িক আশ্রয়ে আছেন এমনটা জানিয়েছিল দেশটি।

পশ্চিমা কয়েকটি দেশে শেখ হাসিনাকে স্থায়ীভাবে অবস্থানের সুযোগ করে দিতে ভারত দূতিয়ালি করলেও সফল হয়নি বলে জানা যাচ্ছিল। পরে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে হাসিনাকে পাঠানোর করার পরিকল্পনা ছিল দেশটির। যদিও আরব আমিরাত আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে বলে খবর বেরিয়েছিল। এবার শেখ হাসিনা সত্যিই আমিরাতে গিয়ে থাকলে কীভাবে গেছেন এবং সেখানে কত দিন থাকবেন সেটা এখনো নিশ্চিত নয়।

শেখ হাসিনা কি আরব আমিরাতে নাকি গুজব?

শেখ হাসিনা ভারতেই স্থায়ী হবেন নাকি অন্য কোনো দেশে যাবেন সেটা নিয়ে আলোচনা চলছিল এতদিন। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম দাবি করছে, আরব আমিরাতের আজমান শহরে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। তবে গতকাল থেকে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে শেখ হাসিনা ভারত ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাতে চলে গেছেন। সেখানকার আজমান শহরে তিনি অবস্থান করছেন। তবে শেখ হাসিনার ভারত ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। নির্ভরযোগ্য কোনো গণমাধ্যম এখনো এই বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। ভারতের কোনো কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। শেখ হাসিনা দুবাই নাকি ভারত?


সম্প্রতি সেখানে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে দেখা গেছে। সেই শহরে শামীম ওসমানের বাড়ি আছে বলে খবর বেরিয়েছে। তাই মনে করা হচ্ছে, আরব আমিরাতের আজমান শহরে শামীম ওসমানের বাড়িতে শেখ হাসিনা আশ্রয় নিতে পারেন।

শেখ হাসিনা এখন কোথায় আছেন? যা বললেন জয়:

সোমবার (৭ অক্টোবর) রাতে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে সজীব ওয়াজেদ জয় জানালেন, শেখ হাসিনার ভারত ছেড়ে যাওয়ার খবর সঠিক নয়। জয় বলেন, ‘আমার মা ভারত ছেড়ে গিয়েছে বলে যে খবর শোনা যাচ্ছে সেটি সঠিক নয়। তিনি এখনো ভারতেই অবস্থান করছেন।’ এর আগে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত ছাড়তে কোনো চাপ নেই।

ভারতের অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশ্ন :

ইতোমধ্যে ভারতে অবস্থানের বৈধ মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছিল শেখ হাসিনা সেখানে কী হিসেবে আছে।
সম্প্রতি একাধিক সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছে জানতে চেয়েছে, শেখ হাসিনা কীভাবে, কোন ব্যবস্থায় দিল্লিতে অবস্থান করছেন? জবাবে ভারত বলেছে, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই মধ্যপাচ্যের কোনো একটি দেশে তিনি চলে যাবেন। তবে এনিয়ে ওয়াশিংটন বা দিল্লি প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।

আমি দেশের কাছাকাছি আছি, যাতে চট করে ঢুকে যেতে পারি: শেখ হাসিনার ফোনালাপ ফাঁস ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেলিফোনে কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তানভীর নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ফোনালাপে শেখ হাসিনা বলেছেন,‘আমি দেশের খুব কাছাকাছি আছি।যাতে আমি চট করে ঢুকে পড়তে পারি।

গত ২৯ আগস্ট খবর প্রকাশ হয়, ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে এবার গাজিয়াবাদ থেকে সরিয়ে নিয়েছে ভারত। তাকে গভীর রাতে হেলিকপ্টারে দিল্লির কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়। তবে স্থানটি কোথায়, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।দিল্লির বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন। Read English Articles

শেখ হা‌সিনার বর্তমান অবস্থান কোথায়, জানে না সরকার:

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে কোথায় আছেন, সে বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কোনো তথ্য নেই। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌ‌হিদ হো‌সেন মন্ত্রণালয়ে আজ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর এসেছে যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে গেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা দিল্লিতে খোঁজ করেছি, সংযুক্ত আরব আমিরাতেও খোঁজ করেছি। কনফারমেশন অফিশিয়ালি কেউ দিতে পারেননি।’

ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা ট্রাভেল পাস নিয়ে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাঁদের ট্রাভেল পাস ইস্যু করবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ মিশন ট্রাভেল পাস ইস্যু করতে পারে শুধু দেশে ফেরার জন্য, অন্য দেশে যাওয়ার জন্য নয়। অন্য দেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্টের প্রয়োজন পড়ে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, তাঁরা যদি দেশে ফিরতে চান, ট্রাভেল পাস ইস্যু করা যেতে পারে এবং তাঁরা দেশে ফিরে আসতে পারেন। আদালত চাইলে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান উপদেষ্টা।

আপাতত ভারতে থাকছেন শেখ হাসিনা:

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপাতত ভারতেই থাকছেন। গুঞ্জন ছিল তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভারত ছেড়ে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। কিন্তু তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।


ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সে দেশের অভিবাসনবিধি অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে আশ্রয় বা অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য দেশটি ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয় না। এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গতকাল মঙ্গলবার এক সর্বদলীয় বৈঠকে বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছে। তিনি গত সোমবার এক ‘শর্ট নোটিশ’-এ ভারতে এসেছেন। তিনি এখনো স্বাভাবিক হতে পারেননি।

স্বাভাবিক হতে এবং ভবিষ্যতের পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাকে সময় দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, শেখ হাসিনা এখন ভারত সরকারের একটি সেফ হাউজে অবস্থান করছেন। সোমবার তিনি যে বিমানে চড়ে ভারতে গিয়েছিলেন, সেই বিমানটি তাকে রেখে গতকাল গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটি ত্যাগ করেছে। তিনি লন্ডনের উদ্দেশে ভারত ছেড়ে যেতে পারেন। আশ্রয়ের জন্য তিনি যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু এখনো তার আশ্রয়ের আবেদন গৃহীত হয়নি।

উইওনের এক খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী “ডেভিড ল্যামি” বাংলাদেশে সহিংসতার বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন এখনো গ্রহণ করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সহিংসতা বন্ধ করতে, শান্তি ফিরিয়ে আনতে, পরিস্থিতি শান্ত করতে এবং আরো কোনো প্রাণহানি ঠেকাতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

শেষ পর্যন্ত ব্রিটেন শেখ হাসিনার আশ্রয় আবেদন গ্রহণ না করলে তিনি ভারতেই থাকবেন নাকি অন্য কোনো দেশে যাবেন, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনাকে সাময়িক সময়ের জন্য ভারতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে তাকে হয়তো অন্যদেশে যেতে হতে পারে। এক্ষেত্রে তিনি “বেলারুশ” যেতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল!

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল মঙ্গলবার একটি কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে ভিসা প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। শেখ হাসিনার ভিসা যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাহার করেছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি বলেন, ‘ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইনের অধীনে একটি গোপনীয় বিষয়। সেজন্য আমরা পৃথক ভিসা মামলার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি না।’ আরো লেখা পড়ুন

লেখক: সাজিদুর রহমান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button