জিবনী

তোফাজ্জল

তোফাজ্জলের বাস্তব জিবনী

এমন মানুষ এমনই যে, ক্ষমতায় গেলে সব ভুলে যায়। ভুলে যায় নৈতিকতা, মনুষ্যত্ব। শুধু মাথায় থাকে নিজের স্বার্থ। যারা হাল চাষ করে তারা ও পশুকে ওরকম প্রহার করে না।। মেধায় বিবেক বোধ জাগ্রত হয় না। সমাজে শিক্ষকদের শাসন এবং আইনের শাসন দুটোই দরকার। উনি চোর ছিলো না! ওনি পাগল হয়ে স্কুলগুলোতে, বাজারে ঘুরে বেড়াতো! কে খোঁজ নিবে, হয়তো খাবারের খোজে আসছিলো, আর চোর বানাইয়া, ওরে ভাত খাওয়াইয়া মারা হলো।
পাগলের উপর শরীয়ত নাই! এই নিষ্পাপ পাগল টারে এতো এতো কষ্ট দিয়া মারা হলো!!!! যে কারো হৃদয় আতকে ওটবে।

জন্ম ও বংশ পরিচয় : তোফাজ্জল পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। ছেলেটার ত্রিভুবনে কেউ নাই। বাবা-মা, ভাই-বোন কেউ নাই। তার বাবা আবদুর রহমান মারা গেছেন ২০১১ সালে, মা বিউটি বেগম মারা যান ২০১৩ সালে এবং ভাই নাসির উদ্দিন পুলিশের এ এসআই ছিলেন, তিনি মারা যান ২০২৩ সালে ত্রিভূবনের স্বজনহারা এই তোফাজ্জল হোসেন।

মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার কারণ : বছর চারেক আগে প্রেমিকার বিশ্বাসঘাতকতায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে তোফাজ্জল। তবে মাঝেমধ্যে সুস্থ হতেন, কারণ পরিচর্যা করতেন বাবা-মা। -হতভাগা তোফাজ্জলের দুনিয়াতে কেউ নেই।


দুই বছর আগে বোন এক্সিডেন্টে ও ভাই পুলিশ অফিসার ক্যান্সারের মৃত্যুবরণ করে. দুনিয়াতে তোফাজ্জলের আপন বলতে কেউ ছিল না। এরপর আর কখনো সুস্থ হননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন। কখনো কখনো খাবার জুটতো আবার জুটতো না। ফজলুল হক মুসলিম হলে হয়তো খাবারের সন্ধানেই গিয়েছিলেন। পরে চোর সন্দেহে আটক করে মারধর করা হয়। মহামতি শিক্ষার্থীরা একটা ভালো কাজ করেছেন, তোফাজ্জলকে একেবারে মেরে ফেলার আগে পেট পুরে খাইয়েছেন। নিশ্চয়ই তখন বারবার তোফাজ্জলকে আশান্বিত করা হয়েছিল আর মারবো না তুই খেয়ে নে!

প্রতিবাদ জানাই আমরা :
আজকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবথেকে তোল পাড় সৃষ্টি করা নিউজ হলো- যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফজলুল হক হল নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যানীপিঠ। এই রকম একটা স্থানে এই রকম ঘটনা ন্যাকার জনক। এর তিব্র প্রতিবাদ ও নিদ্রা জানাই এবং যারা এদের সাথে জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শান্তি আওতায় আনা হউক যেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আর কেউ এই রকম কার্যকম করার সাহস নাহ্ পায়।

সাধুবাদ জানাই আমরা : একটা নিউজ দেখলাম – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনিদিষ্ট কালের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা হয়েছে, এইটা কে সাধুবাদ জানায়। আমি মনে করি বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ থেকে ছাত্র ও শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধ করা দরকার সারাজীবনের জন্য। একটা বিশ্ব বিদ্যালয়ে হাজার হাজার ছাত্র- ছাত্রী ভর্তি হয়,অবশ্যই তারা মেধার ভিত্তি তে চান্স পায় ও মেধাবী কিন্তু পরবর্তী তে দেখা যায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গুলো এইসব মেধাবী শিক্ষার্থী দেরকে ছাত্র রাজনীতি পদ-পদবী দেওয়ার আশায় তাদের মূল উদ্দেশ্য ভুলে যায়।

এক পর্যায় দেখা যায় ছাত্র – শিক্ষক যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আর হয়ে ওঠে নাহ্- শিক্ষদের সম্মান করে নাহ্। এক পর্যায় স্যার গুলো সাহস পায় নাহ্ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে। আমরা গঠন মূলক আলোচনা – সমালোচনা করবো যাতে করে উক্ত সমস্যা সমধান লক্ষে পৌঁছায়। প্রতিহিংসা তৈরি নাহ্ করে অযৌক্তিক সমালোচনা করে জ্ঞানহীন পরিচয় দিবেন নাহ্। আর আইনের বাস্তবায়ন নাহ্ থাকলে এইভাবে আইন নিজের হাতে তোলে নিবে যেটা মোটেও কাম্য নয়।

৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ:
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় ফজলুল হক হল থেকে ওই তিন শিক্ষার্থীকে আটক করে শাহবাগ থানার পুলিশ।

আটক শিক্ষার্থীরা হলেন:—

১.:—- পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের জালাল আহমেদ।
২:—- মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের মোহাম্মদ সুমন।
৩:—– পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মোত্তাকিন সাকিন।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, চোর সন্দেহে কিছুটা অপ্রকৃতস্থ, মানসীক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলকে প্রথমে হলে ধরে নিয়ে গণপিটুনি দেওয়া হয় এরপর তাকে হল ক্যান্টিনে ভাত খাওয়ানো হয় তারপর বিরতি দিয়ে আবার গণপিটুনি দিতে থাকে তারা। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় কয়েকজন এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক জানায় সে মারা গেছে। শুধুমাত্র মাইরপিট করেই ক্ষান্ত হয়নি ওই ঘাতকেরা।


আরো শুনা যায় যে, কয়েকদফা মাইরপিটের পর তোফাজ্জলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেছেন তোফাজ্জলের মামাতো বোন। তোফাজ্জলের মামাতো বোন একটা বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে বলেন, ‘মূলত রাত ১১টার দিকে আমার বাবাকে ফোন দেওয়া হয়। বলা হয়েছে, আপনি কি তোফাজ্জলের মামা? ‘হ্যাঁ’ বলার পর, তারা বলে– আমরা ওরে আটক করেছি, হলে আছে। ওকে নিতে হলে টাকা দিতে হবে ৩৫ হাজার। ৩৫ হাজার টাকা দিয়া ছাড়ায়া নেন। নইলে আমরা তাকে ছাড়বো না, আরও মারব।’

এদিকে তোফাজ্জলের বড় ভাই এ এস আই নাসির উদ্দিনের স্ত্রী শরিফা আক্তার জানান, তোফাজ্জলকে মারধরের সময় একটি মোবাইল ফোন দিয়ে দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করছিলেন একজন। আমাদের টাকা দেয়ার মত সমর্থন না থাকায় টাকা পাঠাতে পারিনি। আমরা মনে করছি এই টাকার জন্যই তোফাজ্জলের প্রাণ চলে গেছে।

এদিকে অনেকের কাছে খবর শুনা যায় যে, তাকে হত্যার আগে পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিলো বলে অভিযোগ উঠেছে।

সাধারণ জনগণের দাবি : তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, এটা কিছুটা মন্দের ভালো একশন। তবে এখানেই যাতে শেষ না হয়, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই বুঝা যাবে এই পিটুনিতে আরও বেশি সংখ্যক ছাত্র জড়িত ছিলো। এদের প্রত্যেককে চিরুনি অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করতে হবে এবং শক্ত মামলা রুজু করে অত্যন্ত কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, তারা যেই হোক না কেন।

তাতে তারা সাধারণ ছাত্র হোক, কোন রাজনৈতিক পরিচয় থাক বা না থাক, এসবের কোন হিসাব ম্যাটার করে না। ওই জায়গায় যারা উপস্থিত হয়ে পিটিয়ে তোফাজ্জলকে মেরে ফেলেছে, তারা সবাই এই হ ত্যা র আসামী। এদের সবাইকে জরুরিভিত্তিতে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে।

টকশোতে তোফাজ্জল :- তোফাজ্জলের মামাত বোন তানিয়া জানান, তারা তোফাজ্জলকে মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাকে ধরে বেঁধে কোথাও নেওয়া যায় না বলে সে উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। সবশেষ তাকে যেদিন পাবনার মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়ার কথা ছিল, সেদিন সকালে শিকল ভেঙে পালিয়ে যান তিনি।রপর ঢাকায় সে এখানে ওখানে থাকতেন, ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন।

তানিয়া বলেন, “৫ তারিখ (৫ অগাস্ট) রাজু ভাস্কর্যের সামনে যখন টেলিভিশনগুলো লাইভ চলছিল তখন যে বারবার সামনে আসছিল। সে সাক্ষাৎকার দিতে চায়। ওর সেই ভিডিও আমরা দেখছি।”

তোফাজ্জল হোসেনের লিখা পড়া ও ব্যক্তিত্ব: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুজ্জামান আল ইমরান তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে জানান যে, মানসিক ভারসাম্য হারানোর আগে তোফাজ্জল পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তোফাজ্জল হোসেন বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বাংলা বিষয় অনার্স মাস্টার্স শেষ করে বঙ্গবন্ধু ল কলেজে অধ্যায়নরত ছিলেন। এ অবস্থায়ই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।


তোফাজ্জল হোসেনের এমন মৃত্যুর খবর শুনে বরগুনার পাথরঘাটার কাঠালতলী ইউনিয়নে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার সম্পর্কে ফেসবুকে আরো লিখেছেন যে, এই ছেলেটি বেশ স্বজ্জন, পরোপকারী ও নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন ছাত্রনেতা ছিল। ব্যক্তিগত জীবনে প্রেমসংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় প্রথমে কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারায়। এর কিছুদিনের মধ্যে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে তোফাজ্জলের মা, বাবা ও একমাত্র বড় ভাই মারা যান। তোফাজ্জল পরিবার ও অবিভাবকশূন্য হয়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে গত ৩ থেকে ৪ বছর ধরে।

বিগত ২ থেকে ৩ বছর তোফাজ্জল প্রায়ই ঢাকা বিশবিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াত। আমাদের এলাকার যারা ওরে চিনত সবাই সহযোগিতা করত। ক্যাম্পাসে আমাকে দেখলেই দৌড়ে এসে কুশল বিনিময় করত। আমি দেখা হলে ওরে খাবার খেতে বলতাম বা খাওয়ার জন্য টাকা দিতাম অথবা ও মাঝেমধ্যে চেয়ে নিত। খাবার ও খাবার টাকার বাইরে ওর তেমন কোন চাহিদা ছিল না।


তিনি আরও লেখেন, হয়তো আজকেও খাবারের জন্য ও এফএইচ (ফজলুল হক মুসলিম) হলে গিয়েছিল। আজকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হলের ছোট ভাই সাংবাদিক কবির কাননের ফেসবুক ওয়ালে তোফাজ্জলকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেখি যে তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে এফএইচ হলে আটক করেছে। আমি দেখামাত্রই ফোন করে তোফাজ্জলের বিষয়ে কাননকে অবগত করি যে, ও আমার এলাকার ছেলে, আমি ওরে ব্যক্তিগতভাবে জানি, বর্তমানে ও মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন।

হয়তো খাবারের সন্ধানে তোফাজ্জল এফএইচ হলে গেছে। আমি কালকে বলেছিলাম, তুমি ওখানে যারা এখন ওকে আটকে রেখেছে তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখো তোফাজ্জল যে মানসিক ভারসাম্যহীন এটা ওদের অবহিত করো, যাতে ওরে শারীরিকভাবে টর্চার না করে। কানন কিছুক্ষণ পরে আমাকে ফোন দিয়ে জানায় ভাই অরে আর কেউ টর্চার করবে না, তবে আপনি ওর কোনো অভিভাবক কাউকে পাঠান যার কাছে তোফাজ্জলকে দিয়ে দেবে আমি সেই ব্যবস্থা করতেছি।

এরপর আমি আমাদের এলাকার বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এফএইচ হলে গিয়ে তাকে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকে ম্যানেজ করতে পারিনি। ২ ঘণ্টার ব্যবধানে ফেসবুকে দেখি তোফাজ্জল এফএইচ হলের শিক্ষার্থীদের নির্মম নির্যাতনে মারা গিয়েছে

ইমরান আফসোস প্রকাশ করে লেখেন, আহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! ছাত্র নামধারী বিবেকহীন এই নরপিশাচদের জন্য আজকে একটি নিরপরাধ প্রাণ চলে গেল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলঙ্কিত হলো। তোফাজ্জল হত্যার বিচার চাওয়ার মতো ওর পরিবারে অবশিষ্ট আর কেউ নেই। তবে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিচার নিশ্চিত করতে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়ে যাব। তোফাজ্জেলকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান তার চাচা ফজলুল হক।

জানাযা ও দাফন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জলের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর সকালে বরগুনা পাথরঘাটার তালুক গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবা, মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি।এর আগে এদিন সকাল নয়টায় স্থানীয় মাদরাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর তোফাজ্জলের হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা। Read more Articles

Photos

Table of Contents

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button